সম্পাদকীয়

অর্থ পাচার রোধে আরও কঠোর হোন

দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে, বিভিন্ন পদক্ষেপেও যা বন্ধ হচ্ছে না। জানা যায়, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর পাচারের ঘটনা বেড়েছে। ব্যাংক লেনদেন, হুন্ডিসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহে প্রায় ৫৫০টি ব্যাংক হিসাব শনাক্ত করা হয়। সেসব ঘটনায় লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনার জন্য যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে তথ্য বিনিময় করা হয়। এর আগের অর্থবছরে ২৮৫টি ঘটনার তথ্য বিনিময় হয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ১১ হাজার লেনদেনকে সন্দেহজনক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যক্তিগত ২৭ হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংক স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, এসব কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে অর্থ পাচারকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় চলতি অর্থবছরে প্রথম আট মাস জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেন হয়েছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এটি প্রস্তাবিত বাজেটের প্রায় তিনগুণ। একই সময়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এ লেনদেনও প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে বেশি। এ চিত্র থেকেই স্পষ্ট, অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে বেশি দিন সময় লাগবে না। জানা যায়, পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬৫টি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। যেহেতু অর্থ পাচারকারীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে, সেহেতু অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারও বাড়াতে হবে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেটির তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়; টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। অবশ্য অনেকেই মনে করেন, পাচার করা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হবে। অর্থ পাচারের এক বড় কারণ হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি রোধ করা গেলে অর্থ পাচারের প্রবণতা কমবে। দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে অর্থ পাচার কমবে। বস্তুত অর্থ পাচারের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা জরুরি। পাচার হওয়া বিপুল অঙ্কের অর্থ ফেরত আনাটাও জরুরি; যদিও পাচারের অর্থ ফেরত আনা কঠিন। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও কাক্সিক্ষত মাত্রায় রেমিট্যান্স বাড়ছে না। জানা যায়, মোট প্রেরিত রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেক আসে হুন্ডির মাধ্যমে। কাজেই হুন্ডি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত যেসব উপায়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়, তা বহুল আলোচিত। কাজেই পাচার রোধে কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। অর্থ পাচার রোধে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button