ভোজ্যতেল হতে হবে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ ভোজ্য তেল নিশ্চিতকরণ জরুরি। অস্বাস্থ্যকর ভোজ্যতেল মানুষের মধ্যে নানা ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ২০১১-১২ সালের জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, মোট ভোজ্য তেলের ৬৫ শতাংশ ড্রামে বাজারজাত করা হয়। যার ৫৯ শতাংশই ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ নয় এবং ৩৪ শতাংশে সঠিকমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ নেই। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া গেছে। আইন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত না করে ভোজ্যতেল বাজারে ছাড়া দ-নীয় অপরাধ। কিন্তু আইনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা ভোজ্যতেলের বেশিরভাগ নমুনায় মেলেনি ভিটামিন এ। ফলে স্বাস্থ্য-ঝুঁকি আরও বাড়ছে। বাজারে বিক্রি হওয়া ড্রামের অস্বাস্থ্যকর খোলা ভোজ্যতেল ব্যবহার এই পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি লক্ষ্য ৩.৪) অর্জন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। অথচ প্রতি লিটার তেলে মাত্র ২৪ থেকে ৩০ পয়সা বাড়তি খরচ করলে এই স্বাস্থ্য-ঝুঁকি কমানো সম্ভব। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানবদেহে ভিটামিন ‘এ’র স্বল্পতা একটি নীরব মহামারি আকারে ধরা পড়ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশে হৃদরোগ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ, চোখের শুষ্কতা ও কর্নিয়ার ক্ষতি, ইনফেকশন, দেহের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়। পাশাপাশি ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতা মানবদেহে পুষ্টির ঘাটতি ঘটায় এবং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নন-ফুড গ্রেডেড উপকরণে তৈরি কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য পণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত ড্রাম ভোজ্যতেল পরিবহণে ব্যবহার করা হয়। তাই ড্রামে বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্যতেল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ভেজাল মেশানোর সুযোগ থাকে। এছাড়া এসব পুরাতন ড্রামে কোনো প্রকার লেবেল এবং উৎস সনাক্তকরণ তথ্য যুক্ত না করায় তেল সরবরাহের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। যা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও বাধা সৃষ্টি করে। ড্রামের অস্বাস্থ্যকর খোলা ভোজ্যতেল পরিহার করতে ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবিলায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণের বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।