সম্পাদকীয়

সবাইকে সচেতন হতে হবে

ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার খাবার

দেশে রাস্তার পাশের খাবারের দোকান থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ খাবার কিনে খায়। এসব দোকানের বিভিন্ন ধরনের খাবার তুলনামূলক কম দাম এবং মুখরোচক বলেই মানুষ সেসব খাচ্ছে। এসব দোকানের খাবার নিম্নমানের। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি। স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার নামে পরিচিত এসব খাবার কিন্তু সারা বিশ্বেই পরিচিত ও জনপ্রিয়। উন্নত দেশের স্ট্রিট ফুড স্বাস্থ্যসম্মত, উপাদেয় ও আকর্ষণীয় হয়। বাংলাদেশে রাস্তায় যেসব খাবার তৈরি ও বিক্রি হয়, তা বিশুদ্ধ, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। খেতে উপাদেয় বা মুখরোচক হলেও এসব স্ট্রিট ফুড অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত এবং পরিবেশিত হয় বলে বিভিন্ন জটিল ও মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। এসব দোকানে খাবার উন্মুক্ত অবস্থায় তৈরি, বিক্রি ও সাজিয়ে রাখা হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) করা এক গবেষণায় কিছু ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে। জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশে বিক্রি করা চটপটি, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরার শরবত ও সালাদে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। এই ছয়টি স্ট্রিট ফুডে মিলেছে মাত্রাতিরিক্ত ই-কোলাই (মানুষের মলে থাকে), সালমোনেলা এসপিপি ও ভিব্রিও এসপিপি ব্যাকটেরিয়া, যা কলেরা, ডায়রিয়াসহ মানুষের পেটের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। এসব স্ট্রিট ফুড খেয়ে প্রতি ১০ হাজার মানুষের মধ্যে দুজন ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার কারণে অসুস্থ হচ্ছে। একইভাবে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার কারণে চারজন এবং ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার কারণে একজন অসুস্থ হচ্ছে। দূষিত পানি, নোংরা গামছা, অপরিষ্কার হাত, ধুলাবালিময় পরিবেশের কারণে এ ধরনের জীবাণু খাবারে মিশে যাচ্ছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কলেরা ও ই-কোলাই জীবাণু শনাক্তের হার বেড়েছে। ঢাকার মহাখালী এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালের তথ্য মতে, চলতি সপ্তাহে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি রোগীদের ৩৪.৮ শতাংশের শরীরে কলেরা ও ই-কোলাই জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। আগের সপ্তাহে এই হার ছিল ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় ১৩০ পদের রাস্তার খাবার পাওয়া যায়। এসব খাবারের কোনোটিরই গুণগত মানের নিশ্চয়তা নেই। মানুষ প্রতিনিয়তই এসব ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, এসব খাবারের বেশির ভাগই উপাদেয় ও মুখরোচক হিসেবে খাওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় খাবার ও জুসে জীবাণু ঢুকে যাচ্ছে। এ জাতীয় খাবার খেলে মানুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, আলসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ট্রিট ফুড নিরাপদ করতে বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নিয়মিত মনিটর করতে হবে। ঝুঁকিমুক্ত থাকতে সবাইকে সচেতন হতে হবে ও রাস্তার মানহীন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button