সম্পাদকীয়

টিলা কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

টিলা ও পাহাড় ঘেরা আমাদের এ সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এ অঞ্চলগুলোর প্রচুর সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। একসময় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সিলেটের সৌন্দর্যের প্রশংসা করে একে শ্রী ভূমি উপাধি দিয়েছেন। পরিতাপের বিষয় সিলেটের সে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আগের মতো আজ আর নেই। সিলেটেরই চারপাশে যেসব টিলা ও পাহাড় ছিল, সেগুলো গেল ক’বছরে কেটে সাফ করা হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন টিলা যেমন কাটা হচ্ছে, তেমনি খাস বা বন বিভাগের মালিকানাধীন টিলাও কাটা হচ্ছে। টিলা কাটায় পিছিয়ে নেই সরকারি সংস্থাও। কী পরিমাণ টিলা সিলেটে ছিল, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৮৭৫টি টিলা আছে। এসব টিলার আয়তন ৪ হাজার ৮১১ একর। এর বাইরে আড়াই দশকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টিলা কেটে ফেলা হয়েছে। যদিও সরকার এরইমধ্যে পাহাড় ও টিলাকাটা বন্ধে জেল জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের টিলা কাটা আর বন-উজাড়ের আইন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সিলেটে বর্ষা ও বন্যার প্রকোপ বেশি হলেও কর্তৃপক্ষ আদৌ সজাগ বলে মনে হয় না। কেননা সম্প্রতি শহরে ১০ জুন ভোরে নগরীর মেজরটিলা চামেলীবাগ এলাকায় একটি টিলার মাটি ধসে এক পরিবারের তিনজন নিহত হন। সিলেটে টিলা ধসে মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, সিলেট নগর ও জেলায় গত এক দশকে টিলাধসে ৪০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে জৈন্তাপুরেই এক পরিবারের চারজন মারা যান। পরিবেশবিদেরা জানিয়েছেন, নগরের ব্রাহ্মণশাসন, দুসকি, হাওলাদারপাড়া, মেজরটিলা, খাদিমনগর, মালনীছড়া, বালুচর, চন্দসটিলাসহ অন্তত ৩০টি স্থানে টিলার পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ১০ হাজার পরিবার বসবাস করছে। এর বাইরে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়ও টিলার ঢালু ও পাদদেশে অসংখ্য বসতি আছে। যেখানে সিলেট শহরের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল পাহাড় ও টিলার সবুজ আচ্ছাদন। কিন্তু এখন আর সিলেটের সেই সৌন্দর্য নেই, সবুজ হারিয়ে যাচ্ছে। আর এসব পাহাড় ও টিলা রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা অনেকটা নির্বিকার। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তৎপরতা দেখা যায়। তারপর আবার সবাই নিশ্চুপ। সিলেট সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা অনেকটা রোগী মারা যাওয়ার পর চিকিৎসক আসার মতো। টিলা ধসে তিনজন মানুষ মারা যাওয়ার পর তাঁরা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। কাজটি আগে করলে হয়তো তিনটি প্রাণ বেঁচে যেত। সামনে বৃষ্টি ও বন্যার মৌসুম। এ সময়ে ঝুঁকি আরও বাড়বে। তাই এসব পাহাড় ও টিলা রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করবো, টিলার পাদদেশে বসবাসরত মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হোক। একই সঙ্গে কথিত উন্নয়নের নামে কিংবা ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করতে যাঁরা টিলা কাটছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button