সম্পাদকীয়

৮৭ শতাংশ নারী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়

প্রতিবছর প্রাকৃতিক ভাবে নানান দুর্যোগ আসে। এতে দুর্যোগ প্রবণ এলাকার মানুষদের চরম প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাতে হয়। কারো ঘরবাড়ি তলিয়ে নিয়ে যায় ঘূর্ণিঝড়ে। আবার অনেকের বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছরই ঘটে থাকে। ফলে ভুক্তভোগীর বেশি বিপাকে পড়ে জীবন চালানোর ক্ষেত্রে। দুর্যোগে বিপর্যস্ত পরিবারের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীরা বেশি সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকেন। পুরুষরা সমস্যা মোকাবেলা করতে পারলেও নারীদের ক্ষেতে তা বিপরীত চিত্র ধারণ করে। দুর্যোগের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও সেখানে নারীকে পড়তে হয় যৌন হয়রানিসহ নানা হয়রানি ও সহিংসতায়। এ সময় বাড়ির পুরুষ সদস্যরা কখনো কাজের সন্ধানে, কখনো দুর্যোগ থেকে বাঁচতে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু পরিবারের নারী সদস্যরা তার সন্তান, বয়োজ্যেষ্ঠদের দেখভাল করার জন্য পরিবারে দুর্বিষহ কষ্টে পড়ে যান। বিপর্যস্ত এলাকায় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয় নারীকে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের ‘এশিয়ায় জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতির লৈঙ্গিক দিক বা জেন্ডার ডাইমেনশন অব লস অ্যান্ড ড্যামেজ ইন এশিয়া’-বিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব দুর্যোগকবলিত এলাকার ৮৭ শতাংশ নারী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ৫৪ শতাংশ নারী শারীরিক দুর্বলতা এবং ২৫ শতাংশ মাথাঘোরার মতো অসুস্থতায় ভোগে। দেশের নারীরা যে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পুরুষের চেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়, সেটি সহজেই অনুমেয়। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্যোগের কারণে ক্ষতির শিকার মানুষের মধ্যে ৪ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী। গর্ভকালীন জরুরি সেবার অভাবে সন্তান প্রসবকালে অনেক নারী ও কিশোরীর মৃত্যু হয়। অনেকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগের সময় নারী ও শিশুদের আবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হয়, এতে তাদের স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়। দুর্যোগে নারী ও শিশুমৃত্যুর হার পুরুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। এছাড়াও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মেয়েদের বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়। এতে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়ে যায়। বর্তমানে উন্নয়ন সকল কর্মকা-ের সাথে নারীরা জড়িত। নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্যোগে কেনো নারীদের এমন বিপর্যস্তে পড়তে হবে? নারীরা কেনো এমন অবহেলিত এবং বঞ্চিত হবে। সরকার দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে হলে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। দুর্যোগে এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবছর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা নারীদের জন্য সুব্যবস্থা করা হোক, দেশ এগিয়ে যাক। সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটুক আমরা সরকারের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button