সম্পাদকীয়

টেকসই উন্নয়ন অর্জনে নদী রক্ষায় গুরুত্ব দিন

দেশে বড় বড় দালান-কোটা তৈরির মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে নদী, জলাশয়; নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখল-দূষণ-বর্জ্যে মৃতপ্রায়। বিশেষ করে ঢাকাকে ঘিরে শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বুড়িগঙ্গার সর্বত্রই চলছে দখলবাজদের আগ্রাসী থাবা। ঢাকার বাইরেও প্রায় সব জেলা-উপজেলা থেকে একই ধরনের খবর আমরা পাই গণমাধ্যমে। তবে সবচেয়ে বড় খবর হলো, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে। বুড়িগঙ্গার ৬৭টি বড় দূষণ মুখের মধ্যে ৫৬টি ঢাকা ওয়াসার আওতায়। আর তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা দূষণেও বেসরকারি শিল্পকারখানার চেয়ে পিছিয়ে নেই বিসিক, কয়েকটি সিটি করপোরেশন। সারাদেশে আগ্রাসী থাবায় নদী আজ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। অবস্থা এমন পর্যায়েই পৌঁছেছে, অনেক নদ-নদীর অস্তিত্বই এখন হুমকির সম্মুখীন। অনেক নদীকে আর বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ‘দাঁত থাকতে মানুষ যেমনি দাঁতের মর্যাদা বুঝে না, তেমনি নদী থাকতে নদীর মর্যাদা দিচ্ছি না আমরা।’ জীবনপ্রবাহকে সচল রাখা নদীগুলোকে প্রতিনিয়ত আমরা হত্যার মহোৎসবে লিপ্ত রয়েছি। এটি অর্থনীতির জন্য, জীবনপ্রবাহের জন্য দুঃসংবাদ। তাই আমাদের প্রাণরসায়ন সচল রাখতে নদী রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ অপরিহার্য। নদী আমাদের আত্মা, আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালক, হৃদয়ের স্পন্দন। এসব গুরুত্ব বিবেচনায় নদীকে নদীর মতো থাকতে না দিলে অর্থনীতি, সভ্যতা, সংস্কৃতি- সবই পড়বে হুমকিতে। নদী-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদী রক্ষা করা জরুরি। টেকসই উন্নয়ন ও নদী রক্ষায় সম্মিলিতভাবে সামনে এগোতে হবে। কেননা, মানুষ বুঝে না বুঝে নদীকে ব্যবহার করছে। নদীর কাছেই গড়ে উঠেছে বড় বড় কল-কারখানা, নদীতে চলে এখন হাজার হাজার লঞ্চ-স্টিমার। নদীতে শত শত বাঁধ। নদী দখল, নদীদূষণসহ যখন যেভাবে প্রয়োজন, তখন সেভাবেই নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের প্রতি জেলায় নদী রক্ষা কমিটি রয়েছে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে। বাস্তবে এই কমিটির তৎপরতা লক্ষণীয় হচ্ছে না নদী ভরাট, বালি উত্তোলন, দূষণ ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে। অথচ স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এই কমিটি নদী খননের প্রশাসনিক আইনি কার্যাদি ও নদী রক্ষায় নানা সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূূচি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু নদী বাঁচাতে তাদের তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে, পরিবেশকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন না করলে তা টেকসই হবে না। এজন্য শুধু সরকার বা বিভিন্ন সংস্থাকে কাজ করলে চলবে না, সমাজের প্রত্যেক মানুষকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করত হবে। পরিবেশ বাঁচিয়েই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সম্ভব করতে হবে। মানুষ যেমন হৃৎপি- না থাকলে বাঁচে না, তেমনি নদী না থাকলে দেশকে বাঁচানো সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button