সম্পাদকীয়

চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপনা থামছেই না!

বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের মধ্যে চিকিৎসা সেবা অন্যতম। মানুষ যেন উন্নত চিকিৎসাসেবা নিতে পারে সেদিকে লক্ষ রেখে সরকার চিকিৎসা সেবাই বাজেট বরাদ্দ করে থাকে। যদিও তুলনা মূলক ভাবে অন্য খাত গুলোর তুলনায় স্বাস্থ্যে খাতে সরকার বরাদ্দ কিছুটা কম রাখে কিন্তু টাকার অংকে একদমই কম নয়। বরাদ্দ অনুযায়ী যদি সঠিক জায়গায় সঠিক পরিকল্পনা থাকতো তাহলে এই বরাদ্দ দিয়েই বাংলাদেশে উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হতো। কিন্তু এই বরাদ্দ গুলোর অধিকাংশ লুটপাটদের দখলে। তারা বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের অধিকার। পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ১০ কোটি টাকা মূল্যের ‘লিনিয়ার এক্সিলেটর’ মেশিন ১২ বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যতম জরুরি রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে ছয়টি। এর চারটিই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গত ৭ বছর ধরে নষ্ট পড়ে আছে প্রায় ১০ কোটি টাকায় কেনা একটি এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন। ২০২০ সালের শেষের দিকে একবার যন্ত্রটি বিকল হয়েছিল। পরে মেরামত করে চালু করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাসে একেবারে অকার্যকর হয়ে যায়। এ চিত্র শুধু দু-তিনটি হাসপাতালে নয়, দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে বছরের পর বছর যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। অনেক হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে, এমআরআই মেশিন বসানো হলেও তা আর চালু করা হয়নি। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত একটি স্বাস্থ্য অন্যটি শিক্ষা। আর এ দুই খাতেই আমরা সবচেয়ে বেশি অনিয়ম দুর্নীতি দেখতে পাই। নামিদামি হাসপাতালগুলোতেও একই অবস্থা। প্রয়োজনে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এভাবে দুর্নীতি ছড়িয়েছে ছিটিয়ে আছে একদম নিচের কর্মী থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনছে যা ব্যবহারই করা যাচ্ছে না। এসব কেনাকাটায় চলে লুটপাট। একদিকে স্বজনপ্রীতি চলছে আরেক দিকে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। সেবা প্রদান থেকে শুরু প্রতিটি ধাপে যদি এত দুর্বলতা থাকে তাহলে সেই খাত কি এগোতে পারবে? নিশ্চয় এমন দুর্নীতি জড়িত থাকলে কখনো সেবা খাতে এগিয়ে যাবে না। সুতরাং এখনি উপযুক্ত সময় সরকারি বরাদ্দ যারা এভাবে ধ্বংস করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে সরকারকে। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রত্যেকটি হাসপাতাল থেকে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, বিনিময়ে চিকিৎসা সেবায় মানুষ আস্থা ফিরিয়ে আনুন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button