সম্পাদকীয়

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা ভোক্তা

বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকটের দোহাই দিয়ে গত দুই বছর ধরে বাজারে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে হুহু করে। একই সময়ে ডলার সংকটের কারণেও পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে, কমেছে টাকার মান। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভোক্তার আয় বাড়েনি সমহারে। ফলে ভোক্তার আয় বৃদ্ধির পুরোটাই চলে গেছে মূল্যস্ফীতির পেটে। ভোক্তার আয় যে হারে বাড়ছে, এর চেয়ে বেশি বাড়ছে ভোক্তার খরচ। ফলে ভোক্তাকে সংসার চালাতে টাকার সংকটে ভোগতে হচ্ছে। এতে জীবিকার অত্যাবশ্যকীয় কিছু উপকরণ থেকে যেমন খরচ কমাতে হয়েছে, তেমনই কমাতে হয়েছে জীবনযাত্রার মান। দুই বছরে ভোক্তাদের একটি অংশকে ধারদেনা করে জীবিকানির্বাহ করতে হয়েছে। টানা দুই বছর এই প্রবণতা চলায় ভোক্তাদের ঋণগ্রস্ততা যেমন বেড়েছে, তেমনই ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাও হারিয়েছে। সব মিলে আয় ও ব্যয়ের ঘাটতি বাড়ায় সংসারের খরচ চালাতে বিপর্যস্ত ভোক্তা। অনেকে অর্থ সংকটে পড়ে মৌলিক খাদ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এতে দরিদ্র মানুষ পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির চাপ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতন, ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বলতা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে যে অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে এর ফলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর হয়ে গেছে। এই মূল্যস্ফীতি কমানোর মৌলিক নীতি হলো বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানো ও সুদের হার বাড়িয়ে দেয়া। সারা বিশ্ব এ নীতি অনুসরণ করেছে। কিন্তু আমরা এ পথে অগ্রসর হইনি। বাজারে সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম কেন বাড়ছে, তা স্পষ্ট নয়। পণ্যমূল্য যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, এর দায় তাদের ওপরই বর্তায়। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টি বহুল আলোচিত। ভুলে গেলে চলবে না, শর্ষের ভেতরে ভূত থাকলে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, কাক্সিক্ষত সুফলপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। দেশের মানুষ যাতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে, সেজন্য নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই হবে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি অথবা বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাকে চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণে সুফল মিললেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এর দায় নীতির নয়, দায় আমাদের নৈতিকতার। যখন নৈতিকতার অবক্ষয় হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই আইনের কঠোর প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সরকার জনসাধারণের কথা চিন্তা করে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button