সম্পাদকীয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হোক

প্রযুক্তির বিকাশ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) উল্লেখযোগ্য অংশই এ খাতে ব্যয় করে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা হতাশাজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা। উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতেও গবেষণা অন্যতম পূর্বশর্ত। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যেন ঠিক উল্টো। গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া হয় সামান্য, যতটুকু বরাদ্দ দেয়া হয় সেটিও যথাযথ ব্যবহার হয় না। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কাক্সিক্ষত মানের গবেষণা কার্যক্রম না থাকায় দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে না। ফলে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন গবেষণা নিশ্চিতে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক প্রণোদনা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন বা জাপানের মতো বরাদ্দ দেয়া সম্ভব না হলেও যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, সেটিও যদি সঠিক পথে এবং উপযুক্ত গবেষকদের দ্বারা সম্পন্ন করা হতো, তবে গবেষণায় বাংলাদেশ এতোটা পিছিয়ে থাকতো না। বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো অধ্যাপক-গবেষক রয়েছেন, যারা আর্থিক প্রণোদনা, মূল্যায়ন এবং নিরাপত্তা বা স্বাধীনতার অভাবে গবেষণায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অথচ বর্তমান প্রজন্মকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গবেষণায় কোন বিকল্প নেই। ফলে উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জ্ঞানচর্চার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। গবেষণা ছাড়া এমন পরিবেশ সম্ভব নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কাক্সিক্ষত মানের গবেষণার জন্য সরকারের পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাধ্য করতে হবে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ খরচ করতে, যাতে মেধাবীরা গবেষণার জন্য বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা শেষে ফের দেশে এসে দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আগ্রহী হন। এজন্য প্রয়োজন তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে রাখার উদ্যোগ নেয়া। সরকারকে গবেষণার বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে, যাতে কেউ গবেষণা কার্যক্রমে উদাসীন থাকার অবকাশ না পায়। তাহলেই দেশের উচ্চ শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে ফিরে আসতে পারে। তাই এখনই রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের তৎপর হতে হবে। তাদের একদিকে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর জনদাবির প্রতি দ্রুত সাড়া দিতে হবে, আরেকদিকে এ অর্থের সঠিক ব্যবহারের বিষয়টিও নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button