পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ৯২ শতাংশ শিশু
বর্তমানে বাংলাদেশে ধূমপান করাটা খোলাখুলি ভাবেই সবার চোখে পড়ে। রাস্তা-ঘাট, পার্ক, খেলার মাঠ ইত্যাদি যে যেখানে পারছে সেখানেই ধূমপান গ্রহণ করছে। ধূমপানের বিষয়ে আমাদের দেশে সচরাচর কোনো বাঁধা দেখতে পাওয়া যায় না। যার ফলে উঠতি বয়সের তরুণরা এই তামাকে সহজেই জড়াচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো অনেকে ধূমপান না করলেও এ কী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সম্প্রতি নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ জার্নালে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে ৯২ শতাংশ শিশু ‘সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং’ বা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। ঢাকা ও পাকিস্তানের করাচিতে শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার মাত্রা মূল্যায়নে গবেষণাটি করা হয়। গবেষকদের মতে, ঢাকায় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকায় অনিয়ন্ত্রিত ধূমপানের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপানের হার ১৮ শতাংশ। এছাড়াও জানানো হয় বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধের আইন করা হলেও আইনের প্রয়োগ নেই। ফলে শিশুরা প্রায়শই খেলার মাঠ, পার্ক এবং মেলা প্রাঙ্গণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। এইসব স্থান ধূমপানমুক্ত করা জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গবেষক দলটি ঢাকার ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সি ১ হাজার ৩৬৮ জন শিশুর ‘সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং’য়ে শিকার হওয়া নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে। এর অংশ হিসেবে শিশু ও তাদের বাড়ির বাসিন্দাদের লালা পরীক্ষা, ধূমপানের ধরন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিশু প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের সঙ্গে বসবাস করে তাদের মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের মাত্রা বেশি। ওই গবেষণাটির ফলাফল আসলেই উদ্বেগজনক। যদি শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে না পারা যায়, তাহলে পরবর্তী জীবনে তারা শিক্ষাক্ষেত্রে নিম্নমান এবং উচ্চ হারে ধূমপানের ঝুঁকিতে পড়বে। তাদের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং একই সঙ্গে এ সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়বে। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করলেও ধূমপানের বিষয়ে তেমন সতর্ক না। যার ফলে ধূমপায়ীরা তো ক্ষতির দিকে যাচ্ছেই পাশাপাশি অধূমপায়ীরাও সমান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো ধূমপানের কারণে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া স্বত্বেও সরকার এর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেনো? আমরা ধূমপানের বিষয়ে এমন সহজলভ্যতা আর চাই না। জনসম্মুখে যেন কেউ ধূমপান করতে না পারে এই বিষয়ে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি আগামীতে সরকার ওই বিষয়ে সঠিক সমাধান করবেন।