মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি বাড়াচ্ছে প্রাণহানি
সড়কে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মোটরসাইকেল সংখ্যা। সেইসাথে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকার কারণে সহজেই যে কেউ মোটরসাইকেল চালাতে পারছেন। ট্রাফিকের মামলা থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের মাধ্যমে ঘুষ দিয়ে সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। চালকরা নিয়মনীতি ও নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালান। তারা বেপরোয়া গতিতে চালালেও নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার করেন না। যারা করেন তারা মান সম্মত হেলমেট ব্যবহার করছেন না। হেলমেট না থাকার কারণে অনেকেই দুর্ঘটনার পর মৃত্যুবরণ করছেন। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জানাযায়, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি। সংস্থাটির দাবি, গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আর এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হার বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এবং চলতি বছরের বিদায়ী জুন মাসে দেশে ৫৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮০১ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন হাজার ২৬৭ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেশি। ২১৭টি মোটরসাইকের দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২২২ জনের। এখন যত মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় মোটরসাইকেল আরোহীদের। এজন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কঠোর নজরদারি জরুরি। মোট দুর্ঘটনার প্রায় অর্ধেকই যখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, তখন এর রাশ টেনে ধরতেই হবে। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যেই হোক না কেন, তার জরিমানা ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সজাগ থাকা দরকার। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেবল মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ও ট্রাফিক সপ্তাহ পালন যথেষ্ট নয়। দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানবাহন-সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতাও কাম্য। প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স ছাড়া কেউ যেন মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামতে না পারে, তা কঠোর নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে। মোটকথা, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং আইন পালনে জনসাধারণের সদিচ্ছা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।