সম্পাদকীয়

দেশে মাদকের বিস্তার; অনুপ্রবেশে ঠেকাতে কঠোর হোন

দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে মাদকের বিস্তার। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরও এর বিস্তার কমছে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিত্যনতুন কায়দায় মাদকদ্রব্য দেশে প্রবেশ করছে। পাচার হয়ে আসছে ক্রিস্টাল মেথ, আইস, খাতসহ নতুন নতুন মাদক। অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছে মাদকের ব্যবহার। রাজধানীসহ সারা দেশের শহরগুলোর অলিগলি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের মাদক। শিক্ষার্থীরা মাদক কারবারিদের মূল টার্গেট। তাদের মধ্যে আর রাখঢাক নেই। ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র-ছাত্রীরা এ ক্ষেত্রে এগিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তরুণীদের মধ্যেও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে মাদকের বিস্তার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীরা প্রকাশ্যে রাজধানীর অলিগলিসহ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন করছে। ক্যাম্পাসেই মিলছে স্বল্পমূল্যে মাদক। স্থানীয় মাদক কারবারিরাও কৌশলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কোকেন, গাঁজা, মদ, মারিজুয়ানা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথিডিন, সিসা, এলএসডির মতো মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী থানাগুলোতে হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে বেশ কিছুদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এই সুযোগে সারা দেশে মাদক কারবারিদের উৎসব শুরু হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামা জরুরি হয়ে উঠেছে। অতীতে মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা, জরিমানা ও গ্রেপ্তার করেও মাদকের সরবরাহ ও চাহিদা কমানো যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের চাহিদা ও ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যতটা নজর, ততটা নেই সরবরাহের দিকে। সরবরাহ চলছে প্রায় অবাধে। কাজেই মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ করা, মাদক পরিবহন, বেচাকেনা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ সংশ্লিষ্ট সব অপরাধ দমনে আরো কঠোর হতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অপরাধীদের বিচারকাজ দ্রুততর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিতে ডোপ টেস্ট চালু করতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- বা মৃত্যুদ-। আমরা আশা করি, মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার করতে হবে। যেকোনো মূল্যে মাদকের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button