সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ বাড়ছে। বছরের বেশির ভাগ সময় সূর্যালোক থাকায় বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের ভালো সম্ভাবনার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে জ¦ালানি সংকট দীর্ঘদিনের। ডলার সংকটে জ¦ালানি আমদানি ব্যবস্থাও ভঙ্গুরপ্রায়। পর্যাপ্ত গ্যাসের অভাবে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে এসেছে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হতে পারে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া। তবে এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো দেশে সৌরবিদ্যুতের ক্রয়মূল্য প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। এ দেশে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় তিন-চার গুণ বেশি। বিশ্বজুড়ে গত এক দশকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ক্রমে হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এগুলোর অন্যতম হলো সূর্যের তাপের ভিন্নতা, সৌরবিদ্যুতে শুল্ক-করছাড়, জমির দাম ও সংস্থান এবং বিদ্যুতের সঞ্চালন অবকাঠামো সংকট। প্রতিবেশী দেশ ভারত এসব সুবিধায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। যে কারণে সেখানে সৌরবিদ্যুতের দাম কমে এসেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশে এসব সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে সৌরবিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। ভারতের বিদ্যুৎ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকায় সেখানকার কোম্পানিগুলো কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে। বাংলাদেশে এখনো প্রতিযোগিতা গড়ে না ওঠায় সৌরবিদ্যুতে খরচ পড়ছে ভারতের চেয়ে তিন গুণের বেশি। ক্রয় চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনতে সরকারকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিযোগিতার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য শুরুতেই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করার দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। ভারতের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া এক্ষেত্রে অনুসরণীয় হতে পারে। ভারতে সরকারি কোম্পানিগুলো সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে দরপত্র আহ্বান করে থাকে। যেখানে দরপত্র চূড়ান্ত পর্যায়ে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের সর্বনি¤œ মূল্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়। একই সঙ্গে দরপত্রে কোথায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, গ্রিড লাইন পর্যন্ত পৌঁছাতে ইউনিটপ্রতি কত অর্থ খরচ হবে তা বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করে দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তার কেন্দ্র নির্মাণে প্রকল্প ব্যয়, বিশেষত জমির দাম, অবকাঠামো নির্মাণ, পরিচালন ব্যয় এবং নির্দিষ্ট সময় হিসাব করে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারকে প্রস্তাব দেয়। বিশেষ বিধানের আওতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির প্রস্তাব দেয়। ফলে এখানে প্রতিযোগিতার কোনো সুযোগ থাকে না। অন্তর্বর্তী সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।