সম্পাদকীয়

সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ জরুরি

অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্ষমতা দিয়ে মানুষের কল্যাণ করে থাকলেও আমাদের দেশে ঠিক তার বিপরীত চিত্র দেখা যায় অধিকাংশ সময়। কেউ অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষমতাবান আবার কেউ রাজনৈতিক দিক থেকে, এমন অনেকেই অনেক ভাবে ক্ষমতাশীল হয়ে থাকে। কথা হচ্ছে এই ক্ষমতা বল কতটুকু ন্যায় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এটাই মুখ্য বিষয়। ক্ষমতায় যখন ন্যায় কাজের কথা বলা হবে তখন হয়ত বাংলাদেশ একেবারেই লজ্জাজনক অবস্থানে থাকবে। এর মূল কারণ হলো ক্ষমতার অপব্যবহার। আমরা দৈনিক খবরের পাতা খুললেই তার বাস্তব প্রমাণ পেয়ে থাকি। প্রায় প্রত্যেক দিন কোথাও না কোথাও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকেই থাকে। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে হারের গজা বিল থেকে অবৈধ বালু তোলার মহোৎসব চলছে। বছরের পর বছর ধরে বিলে ড্রেজার বসিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, বালু উত্তোলনকারীদের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অনেকে আবার ফায়দা হাসিল করছেন রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে। এ সিন্ডিকেটে কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত রয়েছেন। রাজনৈতিক পদ-পদবি ব্যবহার করে গ্রামবাসীর মতামত উপেক্ষা করে তারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। অবাধে বালু তোলার কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলি জমির সঙ্গে রাস্তাঘাটও। বিলের তলদেশ থেকে বালু তোলার কারণে পার্শ্ববর্তী জমিগুলোও ভেঙে পড়ছে। নিরীহ গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্যাতন। করা হয় হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বাঁধন মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে মৎস্য চাষ ও আহরণের জন্য লিজ আনা হয় হারের গজা বিল। কিন্তু মৎস্য আহরণ শুধু নামেমাত্র। ওই বিল থেকে বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রটি। এই সিন্ডিকেট চক্র শুধু এই জায়গাটিতেই সীমাবদ্ধ নয়, সারাদেশে শত শত চক্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যারা সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ মনে করে অমানবিক আচরণ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। প্রশ্ন হলো এর সমাপ্তি কী আধো দেখবে ভুক্তভোগীরা? বিগত সরকার ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকেও পারেনি এসব চক্রকে নির্মূল করতে; এর মূল কারণ হলো বিগত সরকারের কর্মকর্তারাও এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিল। তবে এমন চিত্র আর আমরা দেখতে চাই না। বিগত সরকারের দ্বারা যা সম্ভব হয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা বাস্তবায়ন করে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন। এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আমরা আশা করব, শুধু একটি কিংবা দুটি জায়গা নয় বরং সারাদেশে এমন চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তা নির্মূল করবেন অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button