সম্পাদকীয়

ইন্টারনেটসেবা সাশ্রয়ী মূল্যে হওয়া প্রয়োজন

বর্তমানে ইন্টারনেটের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও অপরিসীম। ইন্টারনেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর সব কর্মকা-।বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর। অনলাইনে পাঠদান, এমনকি টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণেও অনলাইন-নির্ভরতা বেড়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃত মানবসম্পদ তৈরিতে ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অনুষঙ্গ। ফলে দেশে ক্রমেই ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ কোটি ৯৪ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল দেশে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি ৬২ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ কোটি ৯ লাখ। এখন দরকার জনগণকে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু অপারেটরগুলোর অতিমাত্রায় মুনাফা লাভের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। যারা ছোট ছোট ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করতেন তারা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। অপারেটররাও প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে নতুন সিদ্ধান্ত আসার পর খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এখন ইন্টারনেটের প্যাকেজগুলো এমনভাবে করা হচ্ছে যাতে নূন্যতম ব্যবহারের জন্য সাত দিনের একটি প্যাকেজ কিনতেও ২০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তে চরম বিরক্ত গ্রাহকরা। এর সঙ্গে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ তো আছেই। পাশাপাশি অব্যবহৃত ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও সমাধান আসেনি। সিংহভাগ গ্রাহকই সেলফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করছে। ফোরজি প্রযুক্তি অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবা আরো সম্প্রসারণের সুযোগ এনে দিয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে অপারেটররা ব্যবসা করলেও সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রাহক। অনেকের অভিযোগ, উচ্চ গতি ও উন্নত সেবার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে সর্বক্ষণ। তাদের মতে, মোবাইল অপারেটরগুলো প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা খরচ করে তাদের বিভিন্ন প্যাকেজ ও সেবার বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে। কোম্পানিগুলো যদি বিজ্ঞাপন খাতসহ অপ্রয়োজনীয় অর্থ খরচ কমিয়ে আনে তাহলে গ্রাহককে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া নেটওয়ার্কের বেহাল, কল ড্রপসহ গ্রাহক হয়রানির কোনো শেষ নেই। অপারেটরদের শহরকেন্দ্রিক মনোযোগ বেশি। কিন্তু গ্রামে তাদের মনোযোগ কম। ফলে গ্রাম এলাকায় ফোরজি সেবা পর্যাপ্ত নয়। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৬৯ দশমিক ২৩ ভাগ তিন দিনের ডেটা প্যাকেজ ব্যবহার করে। এ অবস্থায় জনপ্রিয় এই প্যাকেজ বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীসহ নি¤œ আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে বিটিআরসির যুক্তি, তিন দিনের প্যাকেজে যে পরিমাণ ডেটা দেওয়া হয় তার সবটুকু ব্যবহার করা হয় না। সে কারণে মেয়াদ বাড়ালে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। অথচ এখন হচ্ছে উল্টোটা। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো গতিশীল, উদ্যোগী ও উদ্যমী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলেই স্বস্তি পাবে গ্রাহকরা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button