পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রোপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুত, পরিবহণ, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশে নতুন না। বিএনপি সরকার ২০০২ সালে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি আইনও করেছিল; যদিও তা সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অমনোযোগিতার কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। আমরা সবাই জানি, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর। বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ধরনের পলিথিন শুধু সাময়িক কোনো সমস্যার তৈরি করে না পরিবেশের স্থায়ী ক্ষতি করে। এর কোনোটি প্রকৃতিতে মিশতে দুইশ থেকে চারশ বছর লাগে। এতে একদিকে যেমন শহরের রাস্তাঘাট অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে তেমনি পলিথিনের প্রভাবে ড্রেন ও প্রাকৃতিক জলাশয় নর্দমায় পরিণত হয়ে নাগরিক জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করে, ছড়িয়ে পড়ে রোগজীবাণু। একই সঙ্গে ধ্বংস করে নদী, খাল, বিলের জীববৈচিত্র্য। পলিথিনের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করেই বিশ্বের ৯১টি দেশ ও অঞ্চল পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আমরা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন বাস্তবায়ন করতে পারছি না। কেননা, পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়টি নির্ভর করে সরকারের কঠোরতার ওপর। সরকার যদি পলিথিন বন্ধে কঠোর হয় তাহলেই পলিথিন বন্ধ সম্ভব। এসব প্লাস্টিক ও পলিথিন মূলত মাটি ও নদীতে গিয়ে জমা হয়। পলিথিন ও প্লাস্টিক জমে যাওয়ার কারণে নদী খনন করাও যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশবান্ধব পাট দিয়ে তৈরিকৃত ব্যাগ যদি একবার বাজারজাত করে তার নিয়মিত ব্যবহার প্রচলন করা যায় তা হলে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে পাট বহুলাংশে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আমাদের দেশে তিন হাজার কারখানায় দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হয়। পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন থাকা সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী ব্যবহার করছেন। তাই সরকার ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন কারখানাগুলোয় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তবে এ ক্ষেত্রে কারখানার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কথাও ভাবতে হবে। সরকারের উচিত বিকল্প ব্যাগের কারখানা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা। ক্রেতারা সাশ্রয়ী দামে পলিথিন ব্যাগ পান বলেই কিনে থাকেন। তাঁরা সাশ্রয়ী দামে না পেলে অন্য ব্যাগ কিনতে তাঁরা উৎসাহী হবেন না। তবে ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে সরকারের সিদ্ধান্ত ও একক উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষকে পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে।