ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি
এডিসবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। একইসঙ্গে বাড়ছে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। রাজধানীসহ সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নির্মাণাধীন ভবন, বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চলমান উন্নয়ন কাজ, ডাবের খোসা, একবার ব্যবহার করা প্লাস্টিক সামগ্রীতে পানি জমা হচ্ছে। তাছাড়া ফুলের টব, এসিসহ বিভিন্ন পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা হচ্ছে। এসব জমা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকা হয়ে উঠছে ডেঙ্গুর হটস্পট। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার ৯৭ জন। এর মধ্যে ডিএসসিসি এলাকায় ৫ হাজার ১৯৫ জন, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৯৩৪, ডিএনসিসি এলাকায় ৩ হাজার ৬৯৩, বরিশালে ১ হাজার ৯৯২ এবং খুলনায় ১ হাজার ৪৪১ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর ডেঙ্গুতে দেশে রেকর্ডসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর ফলে মৌসুমের শুরু থেকেই নড়েচড়ে বসে মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান, মসজিদে নামাজের পর ইমামের সচেতনতামূলক বয়ান, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করে সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার এবং লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া মূল কার্যক্রম হিসেবে সকাল-বিকেল মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু এবার জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দেন জনপ্রতিনিধিরা। ঢাকার দুই মেয়রের চেয়ারে প্রশাসক বসানো হলেও ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে শতাধিক কাউন্সিলর এখনো এলাকায় ফেরেননি। ছয়জন সংরক্ষিত কাউন্সিলরসহ ১৬ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বর্তমানে মাঠে রয়েছেন। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বারবার এডিস মশা নিধনে কর্মসূচি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রশাসনিক স্থবিরতার সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও এক ধরনের গা-ছাড়া ভাব চলে এসেছে। জলাশয়, লেক বা ঝোপঝাড়ে মশার লার্ভা নিধনে কোনো কার্যক্রম হচ্ছে না। এমনকি সচেতনতামূলক কোনো কাজও করছে না সিটি করপোরেশন। ফলে আগামী মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। তাই মশকনিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আঞ্চলিক নেতা-কর্মীদের যুক্ত করা যেতে পারে। তবে উদ্যোগটা নিতে হবে সিটি করপোরেশনকেই। প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি বাড়িঘর ও আঙিনা এমনভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যাতে সেখানে এডিস মশা জন্ম নিতে না পারে। খালসহ অন্যান্য জলাশয় পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতাও জরুরি। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।