বেকারত্ব হ্রাসে কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দিন
বিশ্বে আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বেকারত্ব যে কত প্রকট রূপ নিয়েছে, তা জানার জন্য গবেষণার প্রয়োজন হয় না। জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বিদেশ গমন-ইচ্ছুক তরুণদের ভিড় দেখলেই ধারণা করা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জুন মাসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে উঠে এসেছে, দেশে এক বছরে বেকার বেড়েছে দেড় লাখ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ কর্মবাজারে যুক্ত হন। তাঁদের মধ্যে দেশীয় বাজারে খুব বেশি হলে ১২ থেকে ১৩ লাখের কর্মসংস্থান হয়। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয় নূন্যতম মজুরিভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক খাতে, বাকিরা শোভন চাকরিতে যান। আর প্রতিবছর ৮ থেকে ৯ লাখ মানুষ প্রবাসে যান। বাকিদের কাজের কোনো সুযোগ নেই। তবে বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিবিএসের তথ্যমতে, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। অথচ যাদের কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। মানসম্মত শিক্ষার অভাবেই দেশে বেকারত্ব, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি বাড়ছে। জনগোষ্ঠী বাড়লেও সেই তুলনায় দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটা বড় অংশই এখন বেকার। পড়াশোনা শেষ করে বছরের পর বছর চাকরির জন্য অপেক্ষা করছে তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বড় বড় প্রকল্প হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বেসরকারি খাতের প্রসার তেমন ঘটেনি। শিল্পকারখানার জন্য যে অপরিহার্য বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি, তার সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বললেও বেশির ভাগের কাজই শুরু হয়নি। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এতটাই সেকেলে যে যুগের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এ কারণে আমরা বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে কর্মী আনি আর আমাদের উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা বেকার থাকেন। আমাদের দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রতিশ্রুতি আছে পদক্ষেপ নেই। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান করবো, কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হোক। দেশে বেকারত্ব কমাতে হলে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পুরোপুরি চালু করতে হবে। শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে কর্মবাজারে তাঁদের চাহিদা থাকে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির চেয়ে কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে। দ্রুত বেকারত্ব নিরসন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রতি অধিক গুরুত্ব দেবে আশা করি। যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চাইছে, তাতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।