সম্পাদকীয়

কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া দরকার

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে শিক্ষা একটি। আর এই শিক্ষা মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা শিক্ষাই মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক উন্নতির ফলে কর্মসংস্থানের ধারণা দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন কাজের দ্বার উন্মোচন হচ্ছে। যার সঙ্গে বিশেষ শিক্ষা অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্বও বাড়ছে। কর্মমুখী শিক্ষার ধারণা মূলত পেশাগত কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শিক্ষা এক ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা, যা শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা সৃষ্টি করে এবং শিক্ষার্থীকে সৃজনশীল ও উৎপাদনমুখী করে তোলে। কর্মমুখী শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা নয়। এর কাজ জনশক্তিকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কর্মমুখী শিক্ষা মূলত চতুর্মুখী নীতি নিয়ে আবির্ভূত। এগুলো হলো- জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে শিক্ষার্থীকে পরিচয় করানো এবং তার সুপ্ত গুণাবলিকে জাগ্রত করা। শিক্ষার্থীকে নৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করা। গণতন্ত্রমনা, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক নাগরিক হিসেবে তাকে গড়ে তোলা। কর্মক্ষমতা সৃষ্টি করে তাকে কর্মমুখী ও উপার্জনমূলক জনশক্তিতে রূপান্তর করা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সীমিত সম্পদের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শিক্ষিত বেকার ও তাদের মধ্যে হতাশা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে কিন্তু সেই হারে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে বেকারত্ব, আত্মহত্যা, দরিদ্র্যতাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষা এখনও অনেকটা পরাধীন যুগের। এখনও ব্রিটিশদের কেরানি বানানোর শিক্ষাব্যবস্থা দেশে প্রচলিত। প্রচলিত গ্রন্থনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ডিগ্রিধারী শিক্ষিত ব্যক্তি তৈরি করছে বটে; কিন্তু তা কর্মভিত্তিক না হওয়ায় ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে না। ফলস্বরূপ দেশ আজ ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। এ অবস্থা পরিবর্তনে প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষা। দেশব্যাপী কারিগরি শিক্ষার জন্য অনেক প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদির উপর স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কোর্স করার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন জেলা শহরে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আবার কোথাও কোথাও এনজিও কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকেও কারিগরি জ্ঞান আহরণের সুযোগ রয়েছে। দেশে কর্মমুখী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় শিক্ষা, লোকবল, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, আর্থিক ব্যয় সংকুলানের ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রকট সমস্যা বিদ্যমান। এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button