বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিন
ফসলের সুরক্ষায় গত সাত দশক ধরে ব্যবহার হচ্ছে বালাইনাশক বা কীটনাশক। এর সর্বোচ্চ ব্যবহারে চীন ও ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। তবে কৃষি বিভাগ থেকে বিষমুক্ত সবজি চাষের পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত সহনীয় মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিতে বালাইনাশকের ব্যাপক ব্যবহারে পরিবেশ বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করছে। ইতোমধ্যে আরো শতাধিক কোম্পানি বালাইনাশক আমদানি ও উৎপাদনের অনুমোদনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। গত বছর দেশে ৩৯ হাজার টনের বেশি বালাইনাশক ব্যবহার হয়েছে। বর্তমানে এর বাজার এখন সাত হাজার কোটি টাকার মতো। বালাই নাশ করতে বালাইনাশক ব্যবহার করা হলেও তা শুধু বালাই বা ক্ষতিকর রোগজীবাণু ও পোকাই নয়, অনেক উপকারী জীব এমনকি মানুষকেও মেরে ফেলছে। প্রতিবছর দেশে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করছে বিষাক্ত কীটনাশক খেয়ে। আর কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় অসুস্থতার কথা যদি ধরা হয়, তাহলে সেখানে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই, আছে ভোগান্তির চিত্র। এমনকি অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশদূষণ বাড়ছে। তরল বালাইনাশক স্প্রে করার কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, ফসল দূষিত হচ্ছে। দানাদার বালাইনাশক ছিটানোর ফলে সেই সব খেতের মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে। বর্তমানে বালাইনাশকের ব্যবহার মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কীটনাশকের মারাত্মক ক্ষতিকারক সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেহে প্রবেশ করে মারণঘাতী ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত ও অনিরাপদভাবে কীটনাশক প্রয়োগে মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষক। এবং ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর এক-তৃতীয়াংশই কৃষক। আমাদের দেশে বালাইনাশক অবৈধভাবে আমদানি এবং উৎপাদন হচ্ছে। বালাইনাশকের ভারসাম্যহীন ব্যবহারের কারণে অর্থের অপচয় হচ্ছে, এর পাশাপাশি ক্ষতিকর পোকা দমনে বালাইনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে উপকারী পোকা ধ্বংস করা হচ্ছে। নদী-নালা কিংবা জলাধারে এখন সেভাবে ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতন করতে হবে। অর্গানিক উপায়ে খাবার উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। রাসায়নিক কীটনাশক বিক্রির ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠিন নজরদারি এবং অভিযান পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবি। এর যথা ইচ্ছা ব্যবহার বন্ধ না করা গেলে মানবদেহ ও প্রকৃতির ক্ষতি আরো বাড়বে। ফলে পরিবেশ রক্ষা ও জীবন বাঁচাতে ফসল চাষে এখন বালাইনাশক ব্যবহার বন্ধ বা নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। রাসায়নিক বালাইনাশক ছাড়াও বালাই নিয়ন্ত্রণে বিকল্প আছে অনেক, সেসব বিষয়ে কৃষকদের দ্রুত সচেতন করা দরকার।