ভালো কোম্পানিগুলোকে আনতে হবে

জরাগ্রস্ত শেয়ারবাজার
অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছর মেয়াদে অর্থনীতির অন্য খাতের মতো পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ সংঘটিত হয়েছে। এই সময় অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন তালিকাভুক্ত কোম্পানি পুঁজিবাজারের এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় অসংখ্য দুর্বল ও প্রায় অস্তিত্বহীন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারের জন্য আজ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই এসব কোম্পানির আসল চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে। এতে বলা হয়, বাজারে লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির, জাংক শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেক কোম্পানি কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছিল। পরে শেয়ারগুলো বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা মার্কেট থেকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন সেগুলো তাদের ব্যক্তিগত টাকা হয়ে গেছে। এই কারণে লোকসানে পড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত পাঁচ-ছয় বছরে কোনো অর্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেটে যায়নি। তারা প্রতারিত হয়েছে। চোখের সামনে দিয়ে উদ্যোক্তারা শেয়ারগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। শেয়ারবাজারের মূল সমস্যাটি হচ্ছে ভালো শেয়ারের অভাব। ভালো শেয়ার হলো, যা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ উপযোগী শেয়ার। এমনিতে বাজারে অনেক শেয়ার আছে। কয়েকটি ছাড়া বাদবাকি সব শুধু জুয়া খেলার উপযুক্ত, যেগুলোতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করার মতো কোনো অবস্থাই নেই। বিনিয়োগকারীরা দেশের পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল এবং গতিশীল দেখতে চাইলেও বাস্তবতা হচ্ছে, আস্থার সংকট কোনোভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। আস্থার সংকট অনেক বিনিয়োগকারীকে পুঁজিবাজার থেকে দূরে রেখেছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন পর্যন্ত অতটা বিনিয়োগনির্ভর হতে পারেনি, যতটা তা ট্রেডিংনির্ভর। এর ওপর এই বাজারে রয়েছে জুয়াড়িদের প্রভাব। পুঁজিবাজার যখন চাঙ্গা থাকে, তখন বড় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ছোটখাটো অনেক বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগে উৎসাহিত হতে দেখা যায়। বাজারে বিনিয়োগ বলতে যেটি আসে, সেটি মূলত ট্রেডিং। সেখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি অংশকে প্রতিদিনের ব্যবসা করতে আসতে দেখা যায়। এই সুযোগ নিয়ে জুয়াড়িরা বাজারকে ব্যবহার করে মূলধন তুলে নিয়ে যায়, অন্যদিকে পথে বসে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তাদের সর্বস্বান্ত করা হয়। আমাদের শেয়ারবাজারের যে মৌলিক বিষয়গুলো এখনো ঠিকঠাক হয়নি। প্রথম করণীয় হলো ভালো কোম্পানির সাপ্লাই বাড়ানো। বাংলাদেশে বেশ কিছু ভালো কোম্পানি আছে। এ ছাড়া দেশের কয়েক ডজন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি শেয়ারবাজারের বাইরে আছে, তাদের পর্যায়ক্রমে শেয়ারবাজারের তালিকায় আনতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় ভালো কোম্পানিগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।