ব্যবসার অগ্রগতির বাধাগুলো দূর করার পদক্ষেপ নিন

সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্নতা দেখা দিয়েছে। কোভিড-পরবর্তী সময় থেকেই দেশের বিনিয়োগকারীদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পকারখানায় অসন্তোষ উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। বস্তুত উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহ নানা কারণে ভোক্তাদের চাহিদা কমছে। তারল্য সংকট, ডলার সংকটসহ বিভিন্ন সংকট দেশের অর্থনীতিতে নানা মাত্রায় প্রভাব ফেলছে। এদিকে ঋণের উচ্চ সুদের হার নিয়ে উদ্যোক্তারা বিশেষভাবে চিন্তিত। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাস হলেও দেশে ব্যবসার পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের মতোও ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিক কারখানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। এ রকম ভীতিকর পরিবেশ ব্যবসা ও অর্থনীতির জন্য মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের ক্রমাগতভাবে অবনতি হওয়ার তথ্য উঠে আসছিল। এরকম পরিবেশ সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আসার জন্য অনুকূল নয়। আমলাতান্ত্রিকতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও ঘুষ-দুর্নীতি থেকে মুক্ত করে দেশের ব্যবসার পরিবেশ সহজ ও উন্নত করার দাবি দেশের সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে সরকারের যে নীতি ছিল, সেখানে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুষ্টিমেয় কিছু গোষ্ঠী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সীমাহীন সুবিধা পেয়েছে। এই গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা, যাঁরা প্রতিযোগিতামূলক শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে চান, তাঁরা কোণঠাসা ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের শিল্প খাত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গোষ্ঠীতন্ত্রের অচলায়তন ভাঙার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বস্তুত ব্যবসার পরিবেশের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কাজেই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সবার আগে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সুদের হার কমাতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বস্তুত ঋণখেলাপি সংস্কৃতি, অর্থ পাচারের কারণে দেশের ব্যাংক খাত বিশেষভাবে রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। কাজেই খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার কারণে যাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য যা যা করণীয় সবই করতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।