সম্পাদকীয়

বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে

স্বাভাবিক হচ্ছে না পরিস্থিতি

চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে তদারকি, গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করছে। তারপরও স্বাভাবিক হচ্ছে না বাজার। মূল্য কমাতে ছয় পণ্যের শুল্কছাড় করা হলেও এর মধ্যে কেবল ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। এদিকে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি পণ্যের দাম কমলেও চাল, ডাল, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে বাড়তি দরেই নিত্যপণ্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতাকে। অবশ্য সাত দিনের ব্যবধানে একাধিক পণ্যের দাম বাড়লেও তদারকি জোরদারের কারণে কয়েকটি পণ্যের দাম কমেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ, বিগত সরকারের শেষদিকে টানা দুই বছর ছয় মাস ধরে ভোক্তার মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি মাত্রায় বেড়েছে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যেতে হচ্ছে সেই ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে। এ সরকারের প্রথম দুই মাসেও আয়ের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বেশি। ফলে দুই বছর আট মাস ধরে মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে খরচের চেয়ে আয় কম হওয়ায় ভোক্তাকে একদিকে ঋণগ্রস্ত হতে হয়েছে, অন্যদিকে জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে আপোশ করে খরচ কাটছাঁট করতে হয়েছে। এতে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদন খাতে ভোক্তার খরচ কমেছে। ফলে ভোক্তার ভোগ কমেছে। সমস্যাগুলো বিগত সরকারের আমলে সৃষ্টি হলেও তা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রধানত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো হলো-টাকার প্রবাহ হ্রাস, শুল্ক কমানো, সুদের হার বৃদ্ধি এবং বাজার তদারকি জোরদার। এ ছাড়া আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেন তার কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত সরকারকে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। বাজারে যে চেইন রয়েছে, তা ভাঙতে হবে; উৎপাদক বা আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা এই তিন পর্যায় রাখতে হবে। এ ছাড়া পণ্যের দাম কমাতে শুধু শুল্কছাড় যথেষ্ট নয়, বাজার কঠোরভাবে মনিটর করাও প্রয়োজন। পণ্যের দাম কমাতে সরকার যেসব সুবিধা দিচ্ছে, তা ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। তা না হলে বরাবরের মতো ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন, ক্রেতারা হবেন বঞ্চিত। এছাড়া কেউ যাতে বাজারে কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে কোথায় ও কীভাবে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে আইনি উদ্যোগ নিতে হবে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button