সম্পাদকীয়

সড়কে ৭৩ হাজার অনুপযোগী গাড়ি: সংস্কার জরুরি

সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন যেন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনন্দিন পত্রিকার পাতা খুললেই তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ঘটার পরেও কাঙ্খিল কোনো সমাধান মিলছেই না। বরং দিন দিন সড়কে মানুষের তাজা প্রাণ ঝরেই যাচ্ছে। সড়কে এমন দুর্ঘটনা ঘটার পিছনে রয়েছে অনেক গুলো অসচেতনতা। এই অসচেতনতা নির্মূলে সরকার কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখছে তা নিয়ে আছে সংশয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, ঢাকাসহ সারা দেশে ২০ এবং ২৫ বছরের ৭৩ হাজার ৫৭টি পুরোনো গণ ও পণ্য পরিবহনের গাড়ি চলাচল করছে। সরকারের মোটরযান স্ক্যাপ নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী এসব গাড়ি সড়কে চলাচলের অনুপযোগী। সরকারের মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী, বাস ও মিনিবাসের চলাচলের মেয়াদ ২০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। পণ্য পরিবহনের গাড়ির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ বছর। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছরের পুরোনো মোট বাস এবং মিনিবাস আছে ৩৫ হাজার ৭৮২টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে বাস আছে আট হাজার ১৩২টি এবং মিনিবাস ছয় হাজার ৪৭৮টি। ঢাকা মহানগরের বাইরের সব সার্কেলে বাস আছে সাত হাজার ৭০৪টি এবং মিনিবাস আছে ১৩ হাজার ৪৬৮টি। এ ছাড়া ২৫ বছরের পুরোনো মোট ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং ট্যাংকার আছে ৩৭ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে ট্রাক আছে পাঁচ হাজার ৯৫৮টি, কাভার্ড ভ্যান ১৪৯টি, ট্যাংকার ২৮২টি। ঢাকা মহানগরের বাইরের সব সার্কেলে ট্রাক আছে ২৯ হাজার ২১টি, কাভার্ড ভ্যান ৩৫৫টি এবং ট্যাংকার এক হাজার ৫১০টি। সড়ক পরিবহণ আইনের ৩৬ ধারায় যানবাহনের আয়ুষ্কাল বা ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণের বিষয়ে বলা হয়েছে। কিন্তু এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। ২০২৩ সালের মে মাসে বিআরটিএ এক প্রজ্ঞাপনে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকারের ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করে দেয়। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংস্থাটি। বরং একই বছরের আগস্টে প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোনো এসব মোটরযান চলাচলের কারণে সড়কে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে এবং পুরোনো গাড়ি থেকে নির্গত অতিরিক্ত কালো ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ বাড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত যানজটের পেছনেও এসব পুরোনো গাড়ি চলাচল দায়ী। দেশের যানজট নিরসন এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চাইলে সড়কের মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। এই বিষয়ে প্রশাসন এবং বিআরটি’এর যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ওই সমস্যা সমাধানে আসবে বলে আমরা মনে করছি। ওই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন সরকার এটাই সবার প্রত্যাশা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button