মানসিক সমস্যাগ্রস্তদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে
জুলাই-আগস্টে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে হতাহত হয়েছে অনেকে। নিহতদের প্রকৃত পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সেটি হাজার ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলনের মধ্যে হতাহতের ঘটনা, সংঘর্ষ, রক্তপাত প্রত্যক্ষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হচ্ছে অনেককেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন শিক্ষার্থী। সহিংসতা, গুলি, বোমা তারা কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের অনেক সহপাঠীর হয়েছে অঙ্গহানি, অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সামান্য আহত যারা হয়েছেন, তাদের অনেকেরই এখনও ক্ষত শুকায়নি। এমন পরিস্থিতিতে মনের মধ্যে ক্ষত নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। অনেকেই শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি তীব্র মানসিক আঘাত। শুধু আহতরা নন, যাঁরা এসব ঘটনার সংস্পর্শে গিয়েছেন, চোখের সামনে বন্ধুকে, স্বজনকে কিংবা শিশুসহ সাধারণ মানুষকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখেছেন, রক্তের ফোয়ারা দেখেছেন, তাঁরাও সেসব স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকদের মতে, সহিংসতার শিকার কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী উভয়েরই নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এই সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, সেবা নিতে আসা এই ব্যক্তিদের উগ্র মেজাজ, ঘুমের সমস্যা, ভীতি এবং অস্থিরতা কাজ করছিল। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদেরকে চিকিৎসকের কাছে রেফার করা হয়েছে। অনেকেই জানেন না, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকের মতে, আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ‘একিউট স্ট্রেস ডিস-অর্ডার’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার’ বা ‘পিটিএসডি’ হতে পারে। সহিংসতার ভয়ংকর স্মৃতি ফিরে ফিরে আসতে পারে। সব সময় অনিশ্চয়তা, বিপদাশঙ্কায় তটস্থ থাকতে পারেন। ঘুমের সমস্যা, দুঃস্বপ্ন দেখা, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে অক্ষমতা, অমনোযোগিতা, ভুলে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় অনেকে বিষণœতায় আক্রান্ত হতে পারেন। দেখা গেছে, শারীরিক কোনো আঘাত নেই, কিন্তু তাঁরা মানসিক আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মানসিক সমস্যাগ্রস্ত সবারই চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে সমস্যা আরো প্রকট হতে পারে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু যাঁদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই অর্জন, তাঁদের প্রতি কোনো ধরনের অবহেলা কাম্য নয়। সুতরাং সরকারকে এসব মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সু ব্যবস্থার করে দিতে হবে।