শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে
শহর কিংবা গ্রাম সবখানেই এখন শব্দদূষণ। অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা। রাজধানী ঢাকাসহ সকল শহর-গ্রামগঞ্জে বাসাবাড়িতে থাকা অবস্থায়, রাস্তাঘাটে চলাচল করার সময় শব্দদূষণের অত্যাচারে টেকা দায়। গ্রামে অতিরিক্ত প্রাইভেট ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পণ্য বিক্রি, মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রচারগাড়ি প্রতিনিয়ত ঘুরছে-ফিরছে। এ ছাড়াও গ্রামে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে কিশোর ও যুবক দ্বারা রাতভর উচ্চ আওয়াজে বক্সে গান বাজানোর বিষয়টি। বিভিন্ন দিবস ছাড়াও এই উচ্ছৃঙ্খলতা বেড়ে গেছে। গাড়ির বিকট আওয়াজ, উচ্চ স্বরে অকারণে হর্ন বাজানো, বাড়ি নির্মাণের পাইলিং ও ইট ভাঙার আওয়াজ, জোরে মাইক বাজানো, জোরে টিভি বা মোবাইলে ভিডিও চালানো, সাইরেন ইত্যাদিতে শব্দদূষণের শেষ নেই। এতে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে অন্যদিকে বাসায় থাকা রোগীদের বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আর যাদের হার্টের অসুখ আছে, তাদের তো করুণ অবস্থা। এতে সাধারণ মানুষের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। শব্দদূষণের কারণে মানুষ দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা (২০০৬) অনুসারে, দিন ও রাত ভেদে পাঁচটি অঞ্চলে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যেমন- নিরিবিলি এলাকা, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিল্প এলাকা এবং মিশ্র এলাকা। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের কোথাও এই মাত্রা মেনে চলা হয় না, সর্বত্র এই মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের এমন কোনো রাস্তা বা এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে শব্দের মাত্রা ওই নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে রয়েছে। শব্দ দূষণ শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত শব্দ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শব্দ দূষণ উদ্বেগ, বিরক্তি, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া যেমন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে। আমাদের গাড়িচালকদের শব্দদূষণের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাদের লাইসেন্স নেওয়ার সময়ও এ বিষয়ে জ্ঞানের তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। আবার রাস্তায় উচ্চহারে শব্দদূষণ করে গেলে তেমন শাস্তিও হয় না। আমাদের রিকশাচালকরাও তাদের অপেক্ষাকৃত কম শব্দ সৃষ্টিকারী রিংবেল বিনা কারণে বিনা বাধায় বাজিয়ে চলেছেন। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশেই হাজার হাজার যানবাহন চলছে প্রায় কোনো হর্ন বাজানো ছাড়াই। তাই শুধু আইন তৈরি ও আইন প্রয়োগ করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। যথার্থ কারণ ছাড়া যত্রতত্র মাইক বাজানো, উচ্চ শব্দে মিউজিক বাজানো বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে যানবাহনের হর্ন বাজানো কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। আবাসিক এলাকায় যাতে কলকারখানা গড়ে উঠতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।