বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও জোরদার হোক
আবারো দ্বিতীয়বারের মত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা হয়েছে। দুইবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। একবার ঘাতকের বুলেট তাঁর কান ফুটো করে বেরিয়ে গেছে। সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে তিনি এগিয়ে গেছেন। অবশেষে তিনিই পেয়েছেন বিজয়ের বহু আরাধ্য মুকুট। বিপুল উচ্ছ্বাসে দেশবাসী তাঁকে বরণ করে নিয়েছে। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গে আমরাও জনগণের ভোটে নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাই। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও শান্তিপ্রিয় জনগণ শান্তি, সম্প্রীতি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির সাধনায় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার অংশীদারত্ব ও সহযোগিতার অপেক্ষায়। আপনার মহান জাতির নেতৃত্বের এই গুরুত্বপূর্ণ যাত্রা শুরু করার সময় আপনার সাফল্যের জন্য আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।’ মানবাধিকার সংক্রান্ত কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে শীতলতা চলছিলো। এসময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বক্তব্যেও তা প্রকাশ পাচ্ছিলো। তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে অনেকটাই উষ্ণতা দেখা গেছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট নেতাদের সম্পর্ক বরাবরই বেশ ভালো। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে তার উচ্ছ্বসিত ছবিতেও তার প্রতিফলন দেখা যায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে অবধারিতভাবেই এই প্রশ্ন আসছে যে গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বরফ যেভাবে গলতে শুরু করেছিলো, এখনও তা অব্যাহত থাকবে কি না। নাকি, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের মাঝে বড় কোনও পরিবর্তন আসবে? যেকোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত হয় সেই রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের নিরিখে। সেখানে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিংবা ক্ষমতার পালাবদলে তেমন ভূমিকা রাখে না। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে চাইবে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থেই। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে, পরিবর্তিত নেতৃত্বের অধীনে তা আরো জোরদার ও গতিশীল হবে। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশ আগের মতোই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।