ই-বর্জ্যতে পরিবেশ বিপর্যস্ত: যথাসময়ে উদ্যোগ নেওয়া হোক
আমাদের চারপাশের পরিবেশদূষণ ক্রমেই বাড়ছে। যার ফলে ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য হুমকি সরূপ হতে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ^ তথ্য প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই আধুনিকতার ছোঁয়া কম বেশি সকল দেশেই বিদ্ধমান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পুরাতনকে রেখে মানুষের চাহিদা থাকে নতুনত্বের দিকে। আর এই নতুনত্ব দিকে যাওয়ার পিছনে রয়েছে মানুষের সচেতনতার অভাব; যা বয়ে আনছে পরিবেশের বিপর্যয়। মূলত পরিবেশদূষণের বিভিন্ন কারণ থাকলেও বর্তমান যুগে ই-বর্জ্য অন্যতম ভূমিকা রাখছে। ই-বর্জ্য শুধু পরিবেশের জন্য বিপর্যয় নয় বরং এটি মানবদেহের জন্যও বিষাক্ত। সাধারণত যেসব পণ্য থেকে ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে, টিভি ও কম্পিউটার মনিটর, টিভি ও কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, অডিও ও ভিডিও প্লেয়ার, সিএফএল বাল্ব, ভিডিও ক্যামেরা, টেলিফোন ও মোবাইল সেট, ফ্যাক্স ও ফটোকপি মেশিন ইত্যাদি। আইটি, মিডিয়া ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে বাংলাদেশ দিন দিন উন্নতি করছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় হচ্ছে ইলেকট্রিক পণ্যের বাজার। দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এসব পণ্য ব্যবহার থেকে যে ভারী ধাতু ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পরিবেশে ছড়াচ্ছে তা বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনছে। বৈশ্বিক ‘ই-ওয়েস্ট মনিটর রিপোর্ট ২০২৪’ অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ। পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু মোবাইল সেট থেকেই তৈরি হচ্ছে সাড়ে ১০ লাখ টন ই-বর্জ্য। আর ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে তৈরি হচ্ছে ১ দশমিক ৭ লাখ টনের মতো ই-বর্জ্য। প্রতি বছরই এই বর্জ্যরে পরিমাণ ৩০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা না হলে মানুষের গর্ভাবস্থা, শৈশব ও কৈশোরকালে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশকে ব্যাহত করে। এতে ফুসফুসের গঠনগত বিকাশ এবং কার্যকারিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশে মাত্র হাতে গোনা কিছু লাইসেন্সপ্রাপ্ত ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান আছে। এদের কর্মপদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন আছে। মূলত মানুষ এখনও ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন নয়। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের রিসাইকেল প্ল্যান্ট তৈরি করা দরকার। এর সঙ্গে পরিবেশের দিকে নজর দিয়ে এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, সরকার ই-বর্জ্য বিধিমালা ২০২১ বাস্তবায়ন করবে। আমরা এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এখন শুধু আমরা বাস্তবায়ন দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। তবে এই বিষয়ে আমরা দ্রুত সমাধান দেখব, এটাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা।