দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে অব্যবস্থাপনা দুর হোক
সড়কে চরম অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের খামখেয়ালির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের প্রধান সড়কগুলো মৃত্যুকূপে পরিণত হয়ে রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যানবাহন চলাচলে আদতে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি আমরা সবাই জানি; কিন্তু নিজেরাও মানি না, কর্তৃপক্ষকেও উদ্যোগী হতে দেখি না। এর ওপর সড়ক-মহাসড়কে নতুন সমস্যা হিসেবে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। বেপরোয়া গতির এ যানবাহনের কারণে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বেড়েছে। অবশ্য কোথাও কোথাও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশ। মামলা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে, চলছে ডাম্পিং, রেকারিং। কিন্তু সাধারণ চালক-যাত্রীর নিয়ম না মানার মনোভাব আর কর্তৃপক্ষের সার্বিক প্রচেষ্টার অভাবে কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। এ অবস্থা যে চলতে পারে না, তা বলাই বাহুল্য। সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, একই রাস্তায় বৈধ ও অবৈধ এবং দ্রুত ও শ্লথ যানবাহন চলাচল এবং রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট থাকা ইত্যাদি এসব কারণে দুর্ঘটনা কিছুতেই এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। বিগত সরকারের আমলে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতির কথা আর নতুন করে বলার নেই। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ২০১৮ সালে জেল-জরিমানা বৃদ্ধি করে একটি কঠোর সড়ক পরিবহণ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, যদিও পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতাদের চাপে আইনটি শিথিলের উদ্যোগ গ্রহণ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। উপদেষ্টা এই সকল সিদ্ধান্তও ‘রিভিউ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী, অচিরেই নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার কাজ আরম্ভ হবে। অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নানা খাতে সংস্কারকার্য শুরু করেছে। এমন অবস্থায় পরিবহণ খাতে নৈরাজ্য বন্ধ, সড়কে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিমুক্ত যানবাহন তুলে দিয়ে মানসম্মত যানবাহন নামাতে পরিবহণ মালিকদের বাধ্য করা, চালকসহ সংশ্লিষ্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে কাজের অনুমতি প্রদান, যাত্রীসাধারণকে সড়কে সঠিকভাবে চলাচলে বাধ্য করা; ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার মতো বিষয়গুলো এখন সময়ের দাবি।