মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করুন
দু’তিন বছর ধরেই দেশে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগামী; সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নজিরবিহীন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এই অসহনীয় বৃদ্ধি সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করলেও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। কয়েক বছর ধরেই জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে হিমশিম খাওয়া মানুষ এখন দিশেহারা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যার ফলে সাধারণ জনগণের আয়-ব্যয় সামঞ্জস্যপূর্ণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমজীবী, নি¤œবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের আমিষ ও পুষ্টি পূরণ এখন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজারের আগুন যদি এভাবে জ্বলতেই থাকে তবে অনাহারে, অর্ধাহারে ও পুষ্টিহীনতায় আমরাই হয়তো একদিন নিভে যাব। যে কোনো অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। চলমান মূল্যস্ফীতিতে শহুরে জীবনের নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের নিত্যদিনের অধিকাংশ পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় ডিমের মাধ্যমে। সে ডিমও এখন অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দিন দিন শ্রেণিবৈষম্য প্রকট হচ্ছে। বাড়ছে নৈরাজ্য, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট ও আয়বৈষম্য। আর তাই একশ্রেণির মানুষ দিন দিন আঙুল ফুলে বটগাছ হচ্ছে। রাতের আঁধারে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের সচল গতিশীল অর্থনীতি। সিন্ডিকেট জনজীবনে দুর্ভোগ এবং পারিবারিক ও সামাজিক সংকট তৈরি করে। কোনো সভ্য দেশে এমন সিন্ডিকেট থাকতে পারে না। গোটা দেশ ও দেশের ১৮ কোটি মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে এই সিন্ডিকেট বা কারসাজিকারীদের কাছে। এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি কীভাবে পণ্যদ্রব্য পৌঁছানো যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিত। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং ব্যবস্থার মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই ডিস্ট্রিবিউশন চেইন থাকা উচিত, যেখানে ‘উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, ভোক্তা’র শক্ত অবস্থানের বাইরে ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য থাকবে না। উৎপাদনকারী, পাইকার, পরিবহণ ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফার হার যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যেন কোনো অসাধু চক্র নানা অজুহাতে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে না পারে। রাজধানীসহ জেলা শহরগুলোতে এটি বাস্তবায়ন করা গেলে বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখে মূল্যস্ফীতি কমাতে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে সরকারকে আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়া প্রয়োজন।