আহতদের প্রতি অবহেলা অমার্জনীয়
আমাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য কাঠামোই ত্রুটিপূর্ণ। প্রায় সব নাগরিকই এর শিকার। সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়তো চিকিৎসক আছেন; চিকিৎসা সরঞ্জামেরও অভাব নেই। তারপরও কাঠামোর কারণে চিকিৎসা পুরোপুরি পেতে সমস্যা হয়। আহতদের চিকিৎসায় নিশ্চয় সরকারের অগ্রাধিকার আছে। কিন্তু কাঠামোর দুর্বলতার কারণে তার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক সপ্তাহের আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্টের বিজয় ও হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর গঠিত অন্তর্র্বতী সরকার মূলত ছাত্র-জনতার ত্যাগের ফসল। ইতিমধ্যে সরকার তিনমাস পেরিয়ে গেলেও আন্দোলনে আহত হাজার হাজার ছাত্র-জনতা উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহায়তা না পেয়ে হাসপাতালের বেড থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। এটা পুরো জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ও লজ্জাজনক বিষয়। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে ভেতর থেকে ফোঁকলা ও দেউলিয়া করে দিয়েছিল। পতনের দিন পর্যন্ত তাদের লুণ্ঠনের ধারা অব্যাহত ছিল। যে ছাত্র-জনতা অমূল্য জীবন ও রক্তের বিনিময়ে দেশটাকে স্বাধীন করলেন, লুটপাট, গুম-খুনের দু:শাসন থেকে জাতিকে মুক্তি দিলেন, সে সব শহীদ এবং হাজার হাজার আহত, পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণের সম্মুখীন ব্যক্তিদের পরিবারগুলো রাষ্ট্রের কাছে সর্বোচ্চ সম্মান, গুরুত্ব ও সহায়তা পাওয়ার কথা থাকলেও আদতে তারা যে অবহেলা-অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন, তা অমার্জনীয়। পুরো জাতির জন্য এটা এক লজ্জাজনক বাস্তবতা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ ১০০ দিন পূর্ণ হতে যাচ্ছে। অন্যান্য কাজের মধ্যে গণ–অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহায়তা এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি তাদের অগ্রাধিকার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এত দিনেও তারা নিহত ও আহতদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। এর ফলে সহায়তা ও পুনর্বাসনপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অন্তর্র্বতী সরকারের নীতিনির্ধারকেরা আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে প্রচার করেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পদক্ষেপে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পদে এমন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, শুরু থেকেই তাঁর কার্যক্রম তেমন দৃশ্যমান নয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা এবং আহতরা কে কোন অবস্থায় আছেন, সেটাও দেশবাসীকে জানানো। যে কেনো মূল্যে দ্রুততম সময়ে আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।