সম্পাদকীয়

কিশোর গ্যাং বিস্তার রোধ করতে হবে

অপরাধ জগতে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে কিশোর গ্যাং সমাজে নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। হেন কোনো অপরাধ নেই যাতে তারা জড়াচ্ছে না। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, জমি দখলে ভাড়া খাটা, নারীদের উত্যক্ত করা, হামলা, খুন, প্রভাব বিস্তার নিয়ে পারস্পরিক মারামারি থেকে শুরু করে ভয়াবহ সব অপরাধে কিশোর গ্যাং জড়িয়ে পড়েছে। এরা নামে কিশোর হলেও অধিকাংশের বয়স ১৮’র বেশি। রাজধানীসহ সারাদেশে কিশোর গ্যাং ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে কিশোর গ্যাং রয়েছে অন্তত ১৭৩টি। এর মধ্যে রাজধানীতে ৬৬টি, চট্টগ্রামে ৫৭টি এবং অন্যান্য জেলায় কিশোর গ্যাং রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, ডেমরা, সূত্রাপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং সবচেয়ে বেশি। বিগত সরকারের আমলে এর প্রভাব জোরালো-ভাবে পরিলক্ষিত। সরকারের পতন ঘটলেও কতিপয় কিশোরের অপতৎপরতা যেন অপ্রতিরোধ্য। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, দোকান, ভূমিদখলসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কথিত হিংস্র মানুষগুলো কিশোরদের দিয়েই সব ধরনের অপকর্ম সম্পন্ন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে এসব অপরাধ জনজীবনকে অতিষ্ঠ করার বিপুল জনশ্রুতি রয়েছে। নগর-শহর ও গ্রামীণ জনপদেও এদের ব্যবহার করে ভিন্ন মতের লোকদের দমন-পীড়ন-নির্যাতন-মামলা-হামলা-ধনসম্পদ দখলের দৃষ্টান্ত অপরিসীম। বয়সের কারণে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও দুরূহ ব্যাপার ছিল। মাদক-অস্ত্রের ব্যবসা, এলাকায় সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নিরীহ জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শনে তথাকথিত রাজনৈতিক টাউট-বাটপাররা এদের ব্যবহার করেছে অত্যন্ত জঘন্যভাবে। প্রায় প্রতিটি অলিত-গলিতে সবার কাছে এরা পরিচিত এবং এদের ভয়ে সবাই ভীতসন্ত্রস্ত থাকত। সামান্য তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে বিবাদ-বিরোধ-মারামারি-হানাহানি এমনকি হত্যাকা- পরিচালনা করতে এরা পিছপা হতো না। সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর বয়সে হিরোইজম ভাব থাকে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে। তাদের ওপর পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গরিব ও ধনী দুই শ্রেণির পরিবারের কিশোরদের মধ্যেই এই গ্যাং কালচারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ অপরাধ নির্মূলে প্রথাগত প্রক্রিয়ার পরিবর্তে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। জেল থেকে বের হয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা যাতে পুনরায় জড়িত না হয়, তার জন্য জেলে আলাদাভাবে তাদেরকে নিয়ে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button