অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে জুয়া নিষিদ্ধ। অথচ অনলাইন জুয়ার ফাঁদে সর্বস্বান্ত মানুষ। বিশেষ করে ছাত্র-যুবসমাজের ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে। ছাত্র-তরুণদের মধ্যে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়াবহ ভাবে। অনেকে কৌতূহলবশত জুয়ার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে হয়ে যাচ্ছে জুয়ায় আসক্ত। একসময় ক্রিকেট-ফুটবলসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা এবং ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও স্মার্টফোনের সহজলভ্যতার কারণে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে নানাভাবে এখন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া যায়। বিভিন্ন নামে থাকা জুয়ার অ্যাপসগুলোর বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশি ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ দেখিয়ে টোপ দিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করছে। এ ছাড়াও জুয়ার বিভিন্ন কোম্পানি চ্যানেলগুলোতে অবাধ বিজ্ঞাপন প্রচার করায় জুয়া এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। রাষ্ট্রীয় আইনে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট-ফুটবল লীগগুলো বাংলাদেশি চ্যানেলে ও ভিনদেশি চ্যানেলে দেখানোর সময় সেসব চ্যানেলে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হওয়ায় বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এখন যে কেউ চাইলেই অনলাইনে জুয়া খেলতে পারে। আবার এসব অনলাইন জুয়ায় সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য জুয়ার সাইটগুলো কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি লোভের ফাঁদে ফেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডেমো অ্যাকাউন্টে অধিক লাভ দেখিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়, যা অনেক মানুষকে আকৃষ্ট করে। যেকোনো ব্যক্তি চাইলে খুব সহজেই এজেন্ট কিংবা যেকোনো আর্থিক মাধ্যমের দ্বারা নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা রিচার্জ করতে পারেন। অ্যাপগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে, যার ফলে শুরুতে লাভ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে অধিক লাভের আশায় মানুষ আরো টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার সংখ্যাটাই বেশি। অনেক ব্যক্তি ও পরিবার আজ নিঃস্ব কিংবা ধ্বংসের পথে এই অনলাইন জুয়ার কারণে। গ্রাম এলাকায় শ্রমজীবী মানুষ দিনের মজুরির টাকা এই পথে নষ্ট করছে। তাই জুয়ায় আসক্তদের ফেরাতে প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। জুয়ার সাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কঠোর অবস্থান নিতে হবে সরকারকে। জুয়ার সাইট ও লিংক বন্ধ করা না গেলে আগামী প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাবা-মায়ের পরিবারে থাকা কম্পিউটার-মোবাইল ফিল্টারিং করতে হবে। আর আসক্তদের শারীরিক, মানসিক নির্যাতন না করে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে স্বাভাবিক জীবনে। অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর লেনদেনের ওপরও নজর রাখা উচিত। সন্দেহজনক লেনদেন দেখলেই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। সামাজিকভাবে অনলাইন জুয়া কিংবা ঋণের ফাঁদের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।