সম্পাদকীয়

দেশের উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে জোর দিন

দেশের উচ্চশিক্ষার মান আরও বাড়াতে হবে। আর এই মানকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিতে হবে। আমাদের সরকারগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে যা করে যাচ্ছে তা হলো শিক্ষার মানকে বিনষ্ট করা। তারা ভালো করেই জানে, উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে মানুষকে আর সাতপাঁচ বুঝিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না। সঠিকভাবে শিক্ষিতরা উন্নত জীবন পেতে নিয়ত যুদ্ধ করে। তারা জানে, ভালোভাবে বাঁচতে হলে একা ভালো থাকলে হবে না। গোটা সমাজকে ভালো রাখতে হবে। কিন্তু শিক্ষিত সমাজকে নিয়ে আশাবাদী হতে পারছি না। কারণ আমাদের শিক্ষার মান সামনের দিকে তো এগোচ্ছেই না, বরং পিছিয়ে যাচ্ছে। একটি দেশের জনগণ যখন সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তখন কোনো সরকারই অন্যায় কাজগুলো নির্বিঘেœ করতে পারে না। সত্যিকারের শিক্ষিতরা অন্যায় দেখলে চুপ থাকতে পারেন না। পৃথিবীর সব সরকারই অন্য কিছু না জানলেও এটা ভালো করে জানে। এজন্যই তো আরব দেশের রাজারা নানারকম ফন্দিফিকির করে জনগণকে সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে। এটা আমাদের দেশেও করা হচ্ছে। আমাদের দেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বলতে সাধারণ অর্থে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনকে ধরা হয়। এটি একটি অপূর্ণাঙ্গ ধারণা। তা সত্তেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য সরকার এ ব্যবস্থাটুকুও করতে পেরেছে কী? স্কুল-কলেজগুলো শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারছে কী? বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একেকটি আসন যেন সোনার হরিণ! দেশে প্রায় প্রতিবছরই বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ। আর বেড়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয়করণ। একসময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে, এখন আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং বা মানবিচারে বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও তার নাম নেই। একই অবস্থা চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও। একসময় প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়তে আসতেন, এখন সেই সংখ্যা অতি নগণ্য। কিন্তু আমাদের এ দুরবস্থা কেন? চীন বা কোরিয়ার অবস্থা ঠিক তার উল্টো। প্রতি বছর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কারণ শিক্ষা খাতে তাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও তার সুষ্ঠু ব্যবহার রয়েছে। শিক্ষায় উন্নতির অন্যতম শর্ত হলো অর্থ বরাদ্দ। ছাত্রছাত্রীদের বঞ্চিত করে দেশের উন্নয়ন করতে চাইলে তা চূড়ান্ত বোকামি! ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ২৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তেন। এর মধ্যে ছাত্র ৫০৪ জন এবং ছাত্রী ১৬৬ জন। ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬৭৭ জন। ২০২০ সালে ছিলেন ৭৬৭ জন। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত কমছে। ২০২২ সালে দেশে ১০০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন এক হাজার ২৮৭ জন। আগের বছর ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন এক হাজার ৬০৪ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩১৭ জন। আমরা চাই অন্তর্র্বতী সরকার উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করুক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button