সম্পাদকীয়

গঙ্গা বাঁধ নির্মাণ করুণ, কৃষকদের আস্থা ফিরিয়ে আনুন

বাংলাদেশ সাধারণ কৃষি প্রধান দেশ। ফলে কৃষির উপর নির্ভরশীল হতে হয় দেশকে। কিন্তু এই কৃষিকে সচল রাখতে সরকার কতটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, কুষ্টিয়ায় বিগত ৪৪বছর থেকে প্রতিবছর ৬৫ লাখ একর জমি সেচ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছে। এতে কৃষিখাতে বিপর্যয়সহ আশেপাশের এলাকা মরুতে পরিণত হচ্ছে। কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, পদ্মার পানি সংরক্ষণ, খরা মৌসুমে সেচ সুবিধা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, লবণাক্ততা রোধ এবং ভূগর্ভস্থ পানি আয়ত্তে রাখার উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে গঙ্গা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ৪৪ বছর পরও সরকারের আন্তরিকতার অভাবে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ভেড়ামারার বাহিরচর গ্রামের পদ্মা নদীর পারে যে স্থানে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল সে স্থানটি বর্তমানে গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রতিবছর কয়েক লাখ একর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি খরাজনিত কারণেও নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ একর জমির ফসল। ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি। দৈনিক পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, বৃহত্তর কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতার ৯ বছর পর ১৯৮০ সালে ওই প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন বন্যা ও পানিসম্পদ মন্ত্রী কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচরে পদ্মার তীরে গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের পর গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের কাজ আর অগ্রসর হয়নি; বরং ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল ১৯৮১ সালে কেনা বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী গোপন নিলামে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ফলে প্রত্যেক বছর প্রত্যাশা অনুযায়ী ফসল মিলছে না। কৃষি প্রধান দেশে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিগত বছরগুলোতে সমাধান না করায় আমরা উদ্বিগ্ন। তবে এই সমস্যা নিয়ে আমরা আর থাকতে চায় না। সম্পূর্ণ পদ্মা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই হবে। কুষ্টিয়া বাসীর প্রাণের দাবি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুবিধাবঞ্চিত এ অঞ্চলের ৬৫ লাখ একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে এবং কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে লবণাক্ততা রোধ, ভূর্গস্থ পানি আয়ত্তে রেখে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরণসহ পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে অবিলম্বে গঙ্গা বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি বলে আমরা মনে করছি। আমরা আশা করব, এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অতিশীঘ্রই একটি যৌক্তিক সমাধান করবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button