কাজের সঙ্গে শিক্ষার সংযোগ স্থাপন করতে হবে
বেকারত্ব একটি অভিশাপ। এ অভিশাপে বাংলাদেশ জর্জরিত হয়ে আছে। দেশের শিক্ষা কর্মের বাজারের চাহিদা উপযোগী নয়। ফলে এখানে একটা মিস ম্যাচ আছে। কিন্তু শিক্ষার হার বাড়ছে, ফলে শিক্ষিত বেকার বাড়তেই থাকবে। এজন্য শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করা দরকার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি করতে হবে। গত জুলাই আগস্ট মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন যে গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে, তারও পেছনে প্রধান কারণ ছিল বেকারত্ব। বেসরকারি খাতে কাজের সুযোগ তেমন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পর মেধাবী তরুণেরা সরকারি চাকরিতেই বেশি ঝুঁকছেন। কিন্তু কোটার কারণে অনেক মেধাবী সেই চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন বলেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাঁরা। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, তখন বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এ বেকারদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ৭ লাখ ৯৯ হাজার। এর মানে হলো মোট বেকারের প্রায় ৩১ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। দেশের মোট বেকারের প্রতি ৩ জনের ১ জন বিএ-এমএ পাশ করেও চাকরি পাচ্ছেন না। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ বেকার তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা যোগ করলে চিত্রটি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। দেশের মোট বেকারের ৫১ শতাংশই কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। আরও পেছনের দিকে কোভিডের আগে ২০১৬-১৭ সালের দিকে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকার পরিস্থিতি কেমন ছিল তা দেখা যেতে পারে। ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, তখন দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এ বেকার তরুণ গোষ্ঠীর মধ্যে ৪ লাখ ৫ হাজারের চাকরি প্রত্যাশীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল কমপক্ষে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ। বাংলাদেশে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ সন্তোষজনক মাত্রায় হচ্ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ গত ১ দশক ধরে জিডিপির ২২-২৩ শতাংশে আটকে আছে। বেসরকারি বিনিয়োগের এই দুর্ভাগ্যজনিত অবস্থার মধ্যে কী করে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে! দেশে যদি জিডিপির ৩৫ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ হতো, তাহলে চাকরির বাজারে রমরমা অবস্থার সৃষ্টি হতো। দেখা গেছে, দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠুভাবে চলছে না। অনেক সময় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত আসনগুলো অনেকটাই শূন্য থাকে। এ থেকে বুঝতে পারা যায়, শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী করলেই বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হবে না। বেকারত্ব সমস্যার সমাধানের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগটাই হচ্ছে না। তাই তরুণ জনগোষ্ঠীর মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হলে সরকারকে একটি টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।