সম্পাদকীয়

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ

একসময় মধ্যবিত্ত এবং চাকরিজীবী, বিশেষ করে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অবসরকালের প্রধান ভরসা ছিল জাতীয় সঞ্চয়পত্র; কারণ, এটি যেমন নিরাপদ, তেমনি ব্যাংকের স্থায়ী সঞ্চয়ী হিসাবের চেয়ে এখানে প্রাপ্ত সুদের হার ছিল অনেকটাই বেশি। আর এখন কোনো কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের সুদের হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশে উঠেছে। অথচ সঞ্চয়পত্রে সুদের হার গত তিন বছর ধরে সর্বোচ্চ ১১.৭৬ শতাংশেই থেমে আছে। ফলে মানুষ সঞ্চয়পত্রে আগ্রহ হারাচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দিকে যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের প্রতি সরকারেরও আগ্রহ কমছে। জানা যায়, সঞ্চয়পত্র নিয়ে এমন আগ্রহহীনতার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেওয়া ঋণের পূর্বশর্ত। সরকার বরং ট্রেজারি বিল ও বিভিন্ন বন্ড থেকে ১৩.১৯ শতাংশ সুদে বেশি করে ঋণ নিচ্ছে। জানা যায়, আইএমএফ থেকে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার আগে সঞ্চয়পত্রে সুবিধা কমিয়ে বন্ড উৎসাহিত করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পর থেকেই বন্ডের ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়িয়ে যাচ্ছে সরকার। আর সঞ্চয়পত্রে সুবিধা না বাড়িয়ে উল্টো ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরাও নিরুৎসাহ হচ্ছে। অনেক গ্রাহক সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে। তাই সরকারকেও অনেক বেশি অর্থ গ্রাহকদের অর্থ উত্তোলনের চাহিদা মেটাতে ব্যয় করতে হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) সংখ্যা ১১টি। এগুলোর মধ্যে চারটি সঞ্চয়পত্র, দুটি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, একটি ডাক জীবন বীমা, একটি প্রাইজবন্ড এবং প্রবাসীদের জন্য তিনটি বন্ড। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে। মেয়াদ পূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনি¤œ ৭.৭১ শতাংশ। স্কিমভিত্তিক সর্বোচ্চ বর্তমানে তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়া হচ্ছে ১১.০৪ শতাংশ, পূর্ণ মেয়াদে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.২৮ শতাংশ, পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ১১.৭৬ শতাংশ। তবে যাঁদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাঁদের মুনাফার হার কম। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সাধারণত মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি থাকাটাই কাম্য। বহু মানুষ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে পরিবারের খরচ চালান। দুয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি রীতিমতো লাগামহীন। গত মাসেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩.৮০ শতাংশ। এখন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা মিটছে না। তাই তাঁরা বেশি করে সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন। এমতাবস্থায় দেশের সঞ্চয় ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য সঞ্চয়পত্রকে লাভজনক রাখা জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button