হজের প্যাকেজমূল্য সহনীয় করুন

নিবন্ধনে সাড়া কম
২০২৫ সালের হজ নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল গত ১৯ ডিসেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত। এ সময় পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৬৬ হাজার ৭৭২ জন হজযাত্রী। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৭৬১ জন আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬২ হাজার ১১ জন। অথচ সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা। এই হিসাবে এখনো কোটার ৬০ হাজার ৪২৬ জনের আসন খালি রয়েছে। ফলশ্রুতিতে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিবন্ধনের সময় সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার। ফলে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নিবন্ধন করতে পারবেন। ১৭ ডিসেম্বর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখা থেকে হজযাত্রী নিবন্ধনের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি, হজ এজেন্সি, হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় মাধ্যমের হজযাত্রীদের নিবন্ধনের সময় আগামী ১৯ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। মূলত হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে নিবন্ধনে। উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ নিবন্ধন কার্যক্রমে হজে যেতে আগ্রহীদের জন্য টানা সাড়ে ৩ মাস সময় ছিল নিবন্ধন করার। হজযাত্রীদের মাঝে যে তা সাড়া ফেলতে পারেনি, নিবন্ধনের সংখ্যাই তা বলে দিচ্ছে। হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ অনীহার চিত্র অবশ্য নতুন নয়, গত বছরও লক্ষ করা গেছে একই প্রবণতা। এর কারণও রয়েছে। প্রধান কারণ হলো উচ্চ প্যাকেজমূল্য। এছাড়া অভিযোগ আছে, হজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কাছে লাখ লাখ হজযাত্রী একরকম জিম্মি। হজ নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য গড়ে উঠেছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট ও হজযাত্রী পরিবহণ সিন্ডিকেট। সৌদি আরবে বাসা ভাড়াকেন্দ্রিক প্রতারণা, কখনো কখনো হজযাত্রীদের জমা দেওয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। এ পরিপ্রেক্ষিতে হজসংশ্লিষ্টদের কার্যক্রমে সরকারের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করি আমরা। আশার কথা, সরকার অনিয়ম বন্ধ এবং সিন্ডিকেটমুক্ত করে হজ প্যাকেজের মূল্য কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে হজ প্যাকেজের মূল্য এখনো বেশি। দেশের সাধারণ মানুষের সামর্থ্য ও বাস্তবতা বিবেচনা করে হজ প্যাকেজের মূল্য আরও কমানো দরকার। মনে রাখতে হবে, হজ কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বা সেবা নয়, হজ হলো মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত। অথচ আকাশচুম্বী প্যাকেজ মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে হজ। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। হজ প্যাকেজের মূল্য কমিয়ে সহনীয় করা দরকার বলে আমরা মনে করি।