সম্পাদকীয়

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়া চিন্তার বিষয়; চাই সমন্বিত উদ্যোগ

ডেঙ্গু বর্তমান বাংলাদেশের এক অন্যতম আতঙ্কের নাম। মূলত এডিস এজিপ্টি নামক এক জাতের মশার কামড় থেকে হয় এ রোগ। ছোট কালো রং, পায়ের সাদা এবং শরীরের রুপালি সাদা ব্যান্ড দেখে এদের শনাক্ত করা যায়। এ মশা কামড়ানোর দুই থেকে ছয় দিনের মধ্যে ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। এ রোগে জ্বর, গায়ে ব্যথা, পেট ব্যথা; বমিসহ, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, লিভার ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউরের মতো জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়ে রোগীর প্রাণ সংশয় পর্যন্ত ঘটতে পারে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিরোধই এ ভাইরাস মোকাবিলার একমাত্র পন্থা। ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর মানুষ নানাভাবে সতর্ক হয়েছে, রাষ্ট্রও প্রতিকারে বিপুল ব্যয়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে, তা সত্ত্বে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়া চিন্তার বিষয়। এখন ডেঙ্গুর মৌসুম নয়। তবু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, সেদিক দিয়ে বান্দরবানের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এখন মানুষ আঙিনা নোংরা রাখে না, কোথাও পানি জমে না; সবাই আগের চেয়ে অনেক সচেতন। গণপরিবহনে এখন মশার উপদ্রব লক্ষণীয়। এটির ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির বড় কারণ হতে পারে। বৈশ্বিক মহামারি কভিডকালে আমাদের গণপরিবহনে মশারোধী ওষুধ স্প্রে করা হতো। এখন তা করা হয় না। এ ব্যাপারে বাস মালিক সমিতি উদ্যোগ নিলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে তা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। এ ব্যাপারে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। বাস মালিক, চালক ও সহযোগীদের এবং অবশ্যই যাত্রীদের সচেতন করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বেশি জরুরি। অভিজাত কিংবা বস্তি এলাকা হোক, সর্বত্রই এ বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে ঘরের আশপাশ, ঝোপঝাড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। ডেঙ্গু মশাবাহিত রোগ। ফলে এখানে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। সেখানে সর্বস্তরের মানুষসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে মশাবাহী রোগসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী হলো ডেঙ্গু। বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। সে সময় ৫ হাজার ৫০০ মানুষ আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে। এরপর থেকে প্রতি বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে প্রকট আকার ধারণ করে ২০১৯ সালে। বছরটিতে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ১৭৯ জন। এ সমস্যার সমাধান করা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন সরকার-জনগণ সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রয়োগ। শুধু উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ এবং পরিকল্পিত উদ্যোগই পারে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে এ সংকট থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button