সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরও আন্তরিক পদক্ষেপ জরুরি

যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানের তুলনায় ৬০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার উন্নত বিশ্বের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছরে ৫ হাজারেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারায় এবং ১০ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়। ২০১৬ সালের বিআরটিএ-র জরিপ মতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ২৩ হাজার ১৬৬ জন মানুষ নিহত হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় গত পাঁচ বছরে (২০২০ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত) শতাধিক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তাদের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়—মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স আরোহী হিসেবে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সড়ক মহাসড়কগুলো দিন দিন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। সড়ক- মহাসড়কে এখন চলাচল করা মানেই নিজের জীবনবাজি রেখে চলাচল করা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এআরআই) মতে গত দুই দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৫৬ হাজার ৯শত ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ গত ২০ বছরে প্রতিদিন গড়ে ৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে প্রতিদিনের আরো আট দশটি ঘটনার মতো সাধারণ হয়ে গেছে। এ দুর্ঘটনায়। প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো তাজা প্রাণ, ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরতে পারব কিনা সেখানে রয়েছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। গাড়িচালকদের বিশৃঙ্খলা এবং নিজেদের প্রতিযোগিতা ও জোরের কাছে নিঃশেষ হয়ে যায় আমাদের মূল্যবান সোনালি জীবন। গাড়ির চালক গণ ভুলে যায় বেশ কিছু মানুষের জীবন কিছু সময়ের জন্য তাদের জিম্মিদারিতে। এমনকি তারা এটাও ভুলে যায় তারা যে একটা সেবার কাজে নিয়োজিত আছে যে তা। অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে পরিবার ও সমাজের কাছে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে আর নিজেকে মনে করছে অভিশপ্ত। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটছে কিন্তু কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা।সড়ক পথ দিন থেকে দিন হয়ে উঠছে বিপজ্জনক ও আতঙ্কিত। সড়ক-মহাসড়কে কোনোভাবেই শৃঙ্খলা ফিরছে না। ফলে বন্ধ হচ্ছেনা অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা এতে প্রাণ যাচ্ছে একের পর এক মানুষের। এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথোপযুক্ত বাস্তবায়ন। সড়কে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা যেভাবেই হোক দ্রুত দূর করতে হবে।