সম্পাদকীয়

বিদ্যুতের অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর হোন

আগের সরকার বিদ্যুৎ খাতে আকাশচুম্বী সাফল্যের দাবি করেছে। শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এনেছে। এখন জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে অন্তত ৬০০ কোটি ডলার নয়ছয় হয়েছে। ডলারের বিপরীতে বর্তমান টাকার দর ধরে যা প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দিতে কমিশন হিসেবে লুটপাট হয়েছে ৩০০ কোটি ডলার। আর বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালিয়ে কেন্দ্র ভাড়া ও অতিরিক্ত মুনাফা হিসেবে বেসরকারি খাত নিয়ে গেছে বাড়তি ৩০০ কোটি ডলার। গত রোববার অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ওই শ্বেতপত্র হস্তান্তর করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: দুর্নীতির জন্য তৈরি কাঠামো’ শিরোনামের অধ্যায়ে বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১০ সালে জারি করা হয় সবচেয়ে বিতর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন। দফায় দফায় এটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ২০১০ সালে প্রণীত ও ২০২১ সালে সংশোধিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের ক্ষমতাবলে সরকার অপচয়কে উৎসাহিত করছে এবং এর ফলে একশ্রেণির কোম্পানি অতি মুনাফা লুটে নিচ্ছে। অবশ্য অন্তর্র্বতী সরকার গত ৩০ নভেম্বর অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ওই বিতর্কিত আইনটি বাতিল করেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও জ্বালানির অভাবে তা চালানো যায়নি। এর ফলে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। লোডশেডিংয়ে ভুগেছে সাধারণ মানুষ, শিল্পকারখানা। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের ভুল নীতি ও পরিকল্পনার জন্য বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে লুটপাট, অপচয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ জানে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে কম। অথচ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এরই মধ্যে জনগণের অর্থ লোপাটের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ খাতে কখনোই শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি ছিল না। সাবেক সরকার এর ষোলকলা পূর্ণ করেছে। নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাষ্ট্রের সাফল্য উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও হতাশাজনক। অপচয়, দুর্নীতি ও জনদুর্ভোগ কমাতে বিদ্যুৎ খাতে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়ম যাতে মাথা চাড়া না দিতে পারে তাই সরকারকে এখন কঠোর হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button