নতুন বছর শুরু হোক নতুনত্ব নিয়ে, স্বস্তি ফিরুক জনমনে

নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে দিয়ে চলে গেল ২০২৪ সাল। বছরটি শেষ হলেও বিগত বছরে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে রয়েছে জনমনে প্রশ্ন। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছর থেকেই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা তৈরি হয়। ডলার সংকট, করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদির অযুহাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যে মূল্যে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে নি। ধারাবাহিকতায় একের পর এক পণ্যের দাম লাগাম ছাড়া বৃদ্ধি পাওয়াতে সাবেক সরকারের উপর জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তবুও মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল কিছুদিন পর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু জনগণের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত হয়। বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট, দখলদারিত্বের কারণে দ্রব্যমূল্যের উপর বাড়তি প্রভাব পড়েছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে স্বৈরাচার সরকারের অন্যায় আর অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের সূত্র ধরেই পতন হয় স্বৈরাচার সরকারের। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। তখন মানুষের মনে আশা জাগে দ্রব্যে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু সরকার পতনের পর এক দেড় মাস দ্রব্যমূল্যেই কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও তা আর স্থায়ী হয় নি। বিগত সরকারের চাঁদাবাজরা পালালেও নতুন চাঁদাবাজ তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এতে বাজার ব্যবস্থা সাবেক গতিতেই চলতে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ সংস্কার কাজের উদ্যোগ নিয়েও সংস্কার কাজে এগোতে পারেন নি বিভিন্ন কারণে। সরকার পতনের পরেই বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করার অহরহ ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক যানজটসহ বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশ। অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করেও এসব আন্দোলনকারীদের থামাতে পারেন নি। এছাড়াও সরকার পতনের প্রেক্ষিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কারী বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দখলদারিত্ব এবং চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও বেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে পাহাড়ি অঢেল পানির তীব্রতায় পূর্বাঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় দেশকে। এসব চাপের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ সংস্কার করাটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে জনগণও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছুই পায় নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার জনমনে স্বস্তি ফিরাবেন বলে এখনও আস্থা রাখছেন অধিকাংশ মানুষ। এই আস্থার প্রতিদান সরকার দিবেন এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। তবে আর দেরি নয় জনগণ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি প্রভাব, স্বৈরাচার সরকারের আমলের অনিয়ম অত্যাচার, জুলাই-আগস্টে তাজা প্রাণ বিলীন, আন্দোলনে হাজার হাজার আহতসহ বিভিন্ন ত্যাগ স্বীকার করেও স্বস্তি ফিরতে দেরি হওয়ার বিষয়টি মোটেও কাম্য নয়। আমরা আশা করব, বিগত সালের সকল অন্যায় অনিয়ম রুখে দিয়ে নতুন বছর নতুন করে দেশকে এগিয়ে যাবেন সরকার। মানুষ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করবে। থাকবে না কোনো রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসা। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের নতুন বছরে একটি সুশৃঙ্খল দেশ উপহার দিবেন বলে আমরা আশাবাদী।