সম্পাদকীয়

অপরাধ শক্ত হাতে দমনের মনোভাব তৈরি করুন

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সবার প্রত্যাশা ছিল সব সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ন্যায় ও নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে সবকিছু। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্র্বতী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ায় মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, সুদিন ফিরবে শিগগির। মানুষের এই প্রত্যাশা ও বিশ্বাস ভাঙতে শুরু করেছে। বাস্তবে তারা দেখছেন, কোথাও শৃঙ্খলা নেই। সরকার এখন এই শৃঙ্খলা ফেরানোর কঠিন পরীক্ষায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদালত, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, ব্যবসাবাণিজ্য, জনপ্রশাসন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সড়ক-ট্রাফিক সবখানেই বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এসব খাতের অনেকগুলোতেই বিশৃঙ্খলা চরমে উঠেছিল বিগত সরকারের আমলে। প্রত্যাশা ছিল অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তা তো ঘটেনি, বরং কিছু খাতে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ব্যবসাবাণিজ্যে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নতুন কোনো বিনিয়োগ আসছে না। অনেক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হচ্ছে। শুধু হয়রানির উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই হত্যা মামলায় সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আস্থার অভাবে শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে ব্যাপক অবনতি হয়েছে, তা বোঝার জন্য পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হয় না; সাদা চোখেই দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যত্রতত্র রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সংঘর্ষ, গণপিটুনি যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবা যায়, গত তিন মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬৮ জনের! এছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি হাতে হরহামেশাই মহড়া দিতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে। এসব ঘটনায় স্বভাবতই সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তারা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর তিন মাস পেরিয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর পুলিশ আবার সক্রিয় হয়েছে। গ্রেফতার ও বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার মতো সুযোগ দিয়ে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। তারপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন স্বাভাবিক হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে না। বিভিন্ন ঘটনায় নগরীতে জনভোগান্তি সৃষ্টি হলেও পুলিশ সেভাবে অ্যাকশনে যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের গোয়েন্দা কার্যক্রম ও আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ না করা নিয়েও। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সংস্কৃতির অবসান ঘটানো এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button