সম্পাদকীয়

এমন মরণফাঁদ বন্ধ করতে হবে

অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের জন্য দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। ব্যাপারটি অনেকটা নৈমিত্তিক ঘটনাতেও পরিণত হয়েছে। দেশে রেলক্রসিংগুলো অনেকটা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো একজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের বাকশিমুল রেলক্রসিংয়ে গত মঙ্গলবার এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ১০টার দিকে বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুলে একটি ক্রসিং পার হচ্ছিল। এ সময় যাত্রীবাহী অটোরিকশাটি রেললাইনে উঠে পড়ে। এতে অটোরিকশায় থাকা ৪ যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো ৩ যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ অবহেলার দায়ভার কে নেবে, এতগুলো মানুষের প্রাণহানির দায় কে নেবে? এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বটে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। কুমিল্লার ১২০ কিলোমিটার রেলপথে গত পাঁচ বছরে শুধু অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ১৮টি দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জেলার মধ্য দিয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, লাকসাম-নোয়াখালী ও লাকসাম-চাঁদপুর—তিনটি রেলপথের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। অবৈধ রেলক্রসিংয়ের বাইরে রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে, বৈধ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় আরও অনেকে মারা গেছেন। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এই অবৈধ ক্রসিংগুলো পুরোপুরিই অরক্ষিত। এগুলো দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতি বছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। রেলওয়ের উন্নয়নে গত এক যুগে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হলেও লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা রোধে বড় অঙ্কের অর্থের কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। এর ফলে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া লোকদের দ্বারাই বছরের পর বছর চলছে ক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণ। রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ জনসাধারণের উদাসীনতা। মানুষ সচেতন না হলে শুধু গেটম্যান দিয়ে রেলক্রসিং এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব নয়। ট্রেন আসার আগমুহূর্তে রেলক্রসিংয়ে বার ফেলা হলেও সিগন্যাল অমান্য করে পথচারী, মোটরবাইক চালক, এমনকি হালকা যানবাহনও পারাপারের চেষ্টা করে। নিয়ম-কানুন ও আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে লেভেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button