সম্পাদকীয়

তরুণদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে

বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে প্রযুক্তি-জ্ঞান এবং দক্ষতার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান যুগে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বিশেষ করে আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৩ সালের ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে আইসিটি এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থানের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যাকিঞ্জে অ্যান্ড কোম্পানির গবেষণায়ও উল্লেখ করা হয়, কেবল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মীর অভাবের জন্য বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশেও প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি ক্রমশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০% কাজ আগামী দশকের মধ্যে প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে উঠবে, যা নতুন ধরনের আইসিটি এবং ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজন সৃষ্টি করছে। দেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের ফলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, দক্ষ জনবল না থাকায় সেই চাহিদা পূরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রতিবছর ২২ লাখ তরুণ প্রবেশ করেন; যাঁদের একাংশ উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু এই তরুণেরা যে শিক্ষা নেন তা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ২০১৪ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত বেকারের দেশ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। গত ছয় বছরে পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ তরুণ। যদি এই তরুণদের আমরা উপযুক্ত কাজ দিতে পারি, তাঁরা দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন। নিজেদের জীবনমান বাড়ানোর সুযোগ পাবেন। আর যদি তাঁদের কাজে না লাগাতে পারি, তাঁরা সমাজে বোঝা হবেন, তাঁদের শিক্ষার পেছনে রাষ্ট্র ও পরিবারের ব্যয়ও বিফলে যাবে। তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে এখন যা প্রয়োজন, তা হলো তাঁদের প্রযুক্তির ব্যবহারে সক্ষম করে তোলা। এরপর সেই প্রযুক্তি আয়ত্তে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে কেবল শিল্প নয়, মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে কৃষি, বাজার, শিক্ষাক্ষেত্রেও এর ব্যবহার সারা বিশ্বেই বেড়েছে। আমরা যতই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলি না কেন, বাস্তবে খুব অগ্রগতি দেখাতে পারিনি। করোনাকালে অনলাইনে পাঠক্রম চালু করা হলেও তার সুবিধা পেয়েছে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থী। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এ সুবিধার বাইরে ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু কম্পিউটার বিতরণ করলেই শিক্ষা ডিজিটাল হয়ে যাবে না। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে তরুণদের দক্ষ করার ক্ষেত্রে যেমন প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে, তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহারে তাঁদের অভিগম্যতাও বাড়ানোর বিকল্প নেই। প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি পূরণ করার জন্য তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক আইসিটি প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button