কৃষকদের ভোগান্তি দূর হবে কবে

সার ও আলুবীজ সিন্ডিকেটের বেড়াজালে দিশাহারা কৃষকরা। কৃষকেরা যেন সহজে হাতের নাগালে সঠিক দামে সার কিনতে পারেন, এ জন্য সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে সারের ডিলার নিয়োগ করে। জানা গেছে রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর, রাধানগর, লোহানীপাড়া, মধুপুর, বিষ্ণুপুর, দামোদরপুর, কালুপাড়া, কুতুবপুর, গোপীনাথপুর ও গোপালপুরেও এর অন্যথা হয়নি। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ পাওয়া ডিলাররা কেউ ইউনিয়নে গিয়ে সার বিক্রি করছেন না। তাঁরা সবাই বদরগঞ্জ পৌরসভায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে সার বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড পৌর শহরে সারের দোকানে ঝুলিয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকা, এমনকি ১৬ কিলোমিটার দূর থেকে সার নিতে পৌরসভায় আসতে হচ্ছে কৃষকদের। অথচ নিজ ইউনিয়নে থেকে সার কিনতে পারলে তাঁদের দুর্ভোগ কমত। পরিবহণ খরচ ও সময় কম লাগত। অন্যদিকে পৌরসভার খুচরা দোকানগুলোয় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সার কিনতে হয় তাঁদের। চলতি মৌসুমে রংপুরে আলু বীজের চাহিদা এক লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনের মতো। এর বিপরীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) জোগান মাত্র ২ হাজার ৭৯৭ মেট্রিক টন, আর বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে ৫ হাজার ৮২৫ মেট্রিক টন। এছাড়া, হিমাগারগুলোতে মজুত আছে ৭০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। অর্থাৎ বীজ আলুর ঘাটতি অর্ধেকেরও বেশি। বিএডিসি কেজিপ্রতি বীজ আলু ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলো ৭০ থেকে ৮০ টাকা দর নির্ধারণ করলেও ডিলারদের কাছ থেকে কৃষকদের কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। অন্যদিকে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। চলতি মৌসুমে জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর বিপরীতে বীজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে উৎপাদন খরচ না কমালে বাজার থেকে বেশি দামে খাবার আলু কিনতে হবে, এমন আশঙ্কা জেলাবাসীর। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা সার ও বীজ আলুতে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ এতে দিশেহারা হচ্ছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন সংকট নেই। মুন্সিগঞ্জের পর আলু উৎপাদনে দেশের ২য় বৃহত্তম জেলা জয়পুরহাট। এখানকার উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি জেলার ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয় খাবার ও বীজ আলু। কৃষক যেন ন্যায্য মূল্যে আলু বীজ এবং সার কিনতে পারে এটি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রাখতে হবে। আলু বীজ ও সারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কোনোভাবেই যেন বেশি নিতে না পারে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কেউ নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।