সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে ক্যানসারের বাস্তবতা: গবেষণার নতুন পরিসংখ্যান

বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে ৫৩ জন নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি লাখে মোট ১০৬ জন মানুষ বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ গবেষণা কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় পরিচালিত হয়, যেখানে ২ লাখ ১ হাজার ৬৬৮ জন অংশগ্রহণকারী ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের মধ্যে গবেষণার আওতায় আসে। গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের প্রতি লাখে ১১৮ জন এবং নারীদের প্রতি লাখে ৯৬ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বিশেষত, পুরুষদের মধ্যে শ^াসনালি, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ এবং খাদ্যনালির ক্যানসারের হার সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড ও ওভারির ক্যানসার বেশি দেখা যায়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আক্রান্তদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ রোগীর ক্যানসারের সঙ্গে তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৭৫.৮ শতাংশ ধূমপায়ী এবং ৪০.৫ শতাংশ ধোঁয়াহীন তামাক গ্রহণ করেন, যা তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৩৮ ধরনের ক্যানসারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি প্রধান ক্যানসার হলোÑ স্তন, মুখগহ্বর, পাকস্থলী, শ^াসনালি ও জরায়ুমুখের ক্যানসার। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি (৩৬.৪ শতাংশ), আর পুরুষদের মধ্যে গলার ক্যানসার সর্বাধিক (১৩ শতাংশ)। গবেষণার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগী কেমোথেরাপি, সার্জারি ও রেডিওথেরাপির সংমিশ্রিত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন, তবে ৭.৪ শতাংশ রোগী কোনো চিকিৎসাই নেননি। দেশে ক্যানসার সংক্রান্ত গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এখনো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রি না থাকায়, প্রতিবেশী দেশের পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। তবে, বিএসএমএমইউর এই গবেষণা উদ্যোগ ক্যানসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। গবেষণার ফলাফলের আলোকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্যানসার প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অধিক বিনিয়োগ দরকার। বিশেষত, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্তকরণের সুবিধা বাড়ানো এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে, এই মরণব্যাধির প্রকোপ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button