কিডনি ডায়ালিসিস সহজলভ্য করুন

রোগীদের অতিরিক্ত ব্যয়
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ‘আউট অব পকেট কস্ট অব কিডনি ডায়ালিসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়ালিসিসের পেছনে একজন কিডনি রোগীকে মাসে সর্বনি¤œ ছয় হাজার ৬৯০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দুই লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। রোগীপ্রতি মাসিক ব্যয় গড়ে ৪৬ হাজার ৪২৬ টাকা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসার এই দুটি পদ্ধতির কোনোটিই চালাতে না পারার কারণে কিডনি রোগীদের ৭৬ শতাংশই মারা যায়। তদুপরি, দ্রুত বাড়ছে এই রোগ। ১৯৯০ সালে বিশ্বে মোট মৃত্যুর ২৭তম কারণ ছিল দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি)। ২০১০ সালে এটি হয়েছে মৃত্যুর ১৮তম কারণ এবং ২০২০ সালে এসে এটি হয়েছে ১১তম কারণ। জীবনযাত্রার পরিবর্তিত ধরনসহ নানা কারণে সারা পৃথিবীতেই দ্রুত বাড়ছে কিডনি রোগ। বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি মানুষ কিডনির কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতিবছর কিডনি পুরোপুরি বিকল হয়ে যাচ্ছে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের। তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপন করা কিংবা নিয়মিত ডায়ালিসিস করা। কিন্তু কিডনিদাতার অভাব, আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে প্রতিস্থাপন খুবই কম, প্রয়োজনের ৭ শতাংশের মতো। ফলে কিডনি রোগীদের ডায়ালিসিসই ভরসা। বাংলাদেশে এই রোগের প্রকোপের সঙ্গে বাড়ছে ডায়ালিসিস নেওয়া রোগীর সংখ্যা। ২০২১ সালে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া কিডনি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৪০৭, ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৩০৬। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে অনুরূপভাবে। জানা যায়, ২০১২ সালে ডায়ালিসিস করাতেন ২২ হাজার রোগী। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৬৭ হাজার ৬২০। বিআইডিএসের জরিপে দেখা গেছে, একজন রোগীর ৩৫ শতাংশের মতো খরচ হয় ডায়ালিসিস বাবদ। প্রায় ২৩ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধ বাবদ। সব মিলিয়ে হাসপাতালে খরচ মোট ব্যয়ের প্রায় ৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া আছে অনানুষ্ঠানিক খরচ; যেমন- যাতায়াত, রোগীর সঙ্গে আসা লোকজনের খাবার, থাকা ইত্যাদি। জানা যায়, একজন কিডনি রোগীর প্রতি মাসে আটটি ডায়ালিসিসের দরকার হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশেই কম খরচে ডায়ালিসিসের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।