বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা সংকট: সমাধান কোথায়?

বরিশালে ক্যান্সারের বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মিত হলেও তা এখনো চালু হয়নি। ফলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের ২৭ শয্যার ক্যান্সার ওয়ার্ডই এখানকার রোগীদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গত এক বছরে এখানে ক্যান্সার আক্রান্ত চার হাজার ৮০১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, যা বর্তমান অবকাঠামোর তুলনায় অনেক বেশি। ক্যান্সার চিকিৎসার মূল তিনটি পদ্ধতি হলো কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও অস্ত্রোপচার। শেবাচিম হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেডিওথেরাপি যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ রোগীদের প্রায় ৬০ শতাংশেরই রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকদের মতে, রেডিওথেরাপি না পেলে রোগীর সুস্থতার হার কমে যায় এবং জটিলতাও বৃদ্ধি পায়। রেডিওথেরাপি যন্ত্র নষ্ট থাকায় ক্যান্সার আক্রান্তদের ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, কিন্তু অর্থাভাবে অনেকেই সেখানে যেতে পারেন না। ফলে তারা কেবল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েই নিরুপায় হয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা অনুপাতে কমপক্ষে ২০টি রেডিওথেরাপি যন্ত্র দরকার, কিন্তু বর্তমানে শেবাচিমে মাত্র একটি যন্ত্র রয়েছে, সেটিও অকেজো। প্রতি মাসে কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো সমাধান আসেনি। নারীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে এবং পুরুষদের মধ্যে ৩২ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত। পাশাপাশি জরায়ু, মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সারও সাধারণ রোগ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে স্ক্রিনিং সুবিধা না থাকায় রোগ নির্ণয়েও দেরি হচ্ছে, ফলে অনেক রোগী শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এমন বাস্তবতায় বরিশালের ক্যান্সার চিকিৎসা সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। দ্রুত বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু করা, রেডিওথেরাপি যন্ত্র সচল করা এবং জেলা পর্যায়ে স্ক্রিনিং সুবিধা চালু করাই হতে পারে সমস্যার সমাধান।