সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের দুর্নীতি: উন্নতির আড়ালে অবনতি?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪’-এর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতির চিত্রে বাংলাদেশের অবস্থা আরও নাজুক হয়েছে। ২০২৩ সালে বিশে^ বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে, যেখানে ২০২৪ সালে তা ১৪তম স্থানে এসেছে। তবে এটি দুর্নীতি কমার ফল নয়; বরং অন্য দেশগুলোর অবনতি বাংলাদেশকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে দিয়েছে। স্কোরের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪, যা ২০২৪ সালে কমে ২৩ হয়েছে। অর্থাৎ, দুর্নীতির বিস্তার বেড়েছে, কিন্তু অন্যান্য দেশের অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান চার ধাপ এগিয়েছে। দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া এবং নি¤œ স্কোর পাওয়া গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল আফগানিস্তান বাংলাদেশ থেকে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। অথচ একই অঞ্চলের দেশ ভুটান ৭২ স্কোর নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফলতা দেখিয়েছে এবং তাদের অবস্থান অনেক ভালো হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে, সুশাসন ও কার্যকর প্রশাসন থাকলে দুর্নীতির লাগাম টানা সম্ভব। বাংলাদেশে দুর্নীতি বিস্তারের অন্যতম কারণ হলো প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং ক্ষমতাসীনদের নীতি প্রয়োগের ব্যর্থতা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মতে, বিগত ১৩ বছরে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে দুর্নীতি প্রশ্রয় পেয়েছে। সরকার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও বাস্তবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বরং অনেকক্ষেত্রে দুর্নীতিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশে^র দুর্নীতির তুলনামূলক চিত্র দেখলে বোঝা যায়, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড দুর্নীতির নি¤œতম স্তরে রয়েছে। এই দেশগুলোর সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছ নীতির কারণে তারা দুর্নীতি দমন করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং সিরিয়া দুর্নীতির উচ্চতম স্তরে অবস্থান করছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ না করলে এই সূচকে বাংলাদেশ আরও পিছিয়ে পড়বে, যা দেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button